1. asaduzzamann046@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@shomoyeralo24.com : Shomoyer Alo : Shomoyer Alo
শিরোনাম :
চাহিদামতো ঘুষের টাকা নিয়েও কাজ করে না ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ছাগলনাইয়া মৌরী নদীরপারে অপহৃত জসিম উদ্দিন চৌধুরীর লাশ উদ্ধার ইটনায় সেনাবাহিনীর হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার, সংঘর্ষে আহত ১ শেখ হাসিনা কি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আইন কী বলে জুডিশিয়াল ক্যু’র মাধ্যমে ড. ইউনূস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা যেত কী: আইন ও বাস্তবতার বয়ান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মাস্টাররুলে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়িত্বকরণে মানববন্ধন মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলায় বিএনপি নেতার বাড়ীতে যৌথবাহিনী হামলা ও মামলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, আইন কী বলে মুন্সিগঞ্জ টুংগিবাড়ী উপজেলায় বিএনপি নেতা দোলন ও কুমারী মুসরাত গুমের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফেনী সদর উপজেলা মধুপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারে হামলা ও ডাকাতি

অনুভবের কল্পনাতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাক্ষাৎকার!

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৪
  • ৩৪৯ বার

দেশের বর্তমান অস্থির সময়ে ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলের লাইভ সংবাদ দেখছিলাম। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে দপ্তর বন্টনের পর আজ প্রথম কর্ম দিবসে সচিবালয়ে যাচ্ছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জুয়েল ভূঁইয়া। লিকলিকে শরীরের খোঁচা খোঁচা দাড়ি নিয়ে আবহমান বাংলার চিরচেনা এক তাগড়া ও নির্ভীক যুবক অতি সাধারণ সফেদ রঙের পাঞ্জাবি জড়িয়ে সরকারি গাড়ি থেকে সচিবালয়ের গেটে নামলেন। আগে থেকেই অপেক্ষমান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের এই সফল কমান্ডার। কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধীর পদক্ষেপে নিজ মন্ত্রণালয় এসে বসলেন সদ্য সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী ও বিসিবির (লৌহ মানব) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আসনে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে একে একে পরিচিত হলেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন। স্বাক্ষর করলেন কয়েকটি জমে থাকা নথিতে। দপ্তরের প্রাথমিক কাজ শেষ করে, সম্মেলন কক্ষে হাজির হলেন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনের সম্মেলন কক্ষ সাংবাদিকদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ। সব সাংবাদিকদের চোখে মুখে ঔজ্জ্বল্য, মনে হলো দীর্ঘদিনের হারানো বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়ে সাংবাদিকদের প্রত্যেকেই প্রশ্ন বানে জর্জরিত করতে উদগ্রীব উদীয়মান তরুণ এই উপদেষ্টা কে। আজ যেন তাঁরা অনেকেই কীর্তিমান সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন, অনেক অজানা প্রশ্ন তাঁরা জানতে চান।

নির্ধারিত সময়ে উপদেষ্টা এসে সম্মেলন কক্ষে আসন গ্রহণ করলেন। একে একে প্রশ্ন করতে লাগলেন, তিনিও প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলেন। হঠাৎ করে একজন সাংবাদিক হাত তুলে বললেন, মাননীয় উপদেষ্টা আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই, প্রশ্নটি আপনার বিষয়ে, যদি অনুমতি দেন তাহলে প্রশ্নটি নির্ভয়ে করতে চাই। উপদেষ্টা বললেন, অবশ্যই, আপনি নির্ভয়ে যে কোনো প্রশ্ন করুন, যাতে নির্ভয়ে যে কোনো প্রশ্ন করতে পারেন সে জন্যই তো এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। এবার সাংবাদিক তার প্রশ্ন শুরু করলেন, আপনি যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হলেন, এটাতো অনেকটা চাপ প্রয়োগ করে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করার পুরস্কার হিসেবে আপনি এই পদে এসেছেন, আপনি বয়সেও অনেক তরুণ, গত কয়েক দিনের আন্দোলন ছাড়া আপনার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, আপনি পারিবারিকভাবেও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান নন অতএব আপনি এই দপ্তর চালাবেন কী করে?

প্রশ্ন শুনে উপদেষ্টা মহোদয় মুচকি হাসলেন। তারপর খুব ধীর স্থির ভাবে বললেন, দেখুন আমার বর্তমান বয়স ২৬ বছর ১ মাস। আমি যে সংবিধানের অধীনে শপথ নিয়েছি, সেই বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ (১) অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের সংসদ সদস্য হওয়ার যে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে তাঁর বয়স নির্ধারণ করেছে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়া। আপনারা জানেন একজন নাগরিকের বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলেই তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনো দল তাকে মনোনয়ন না দিলেও, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আর বাংলাদেশ যেহেতু সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা অনুসরণ করে, তাই প্রধানমন্ত্রী চাইলে ২৫ বছরের নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রীসভায় নিয়োগ দিতে পারেন। ২৫ বা ২৬ বছরের একজন যুবককে যদি জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য বা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হওয়ার অযোগ্য মনে করতেন তাহলে আমাদের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গগণ যখন গণপরিষদে বসে প্রায় ৩০০ ঘণ্টা ব্যয় করে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ৪ ই ডিসেম্বর এই সংবিধান গ্রহণ করেন তখন সংবিধানে বয়স সংক্রান্ত এরকম বিধান যুক্ত করতেন না। তখন তাঁরা অত্যন্ত দূরদর্শী চিন্তা ভাবনা করেছেন, তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন অদূর ভবিষ্যতে ২৫ বা ২৬ বছরের আধুনিক যুগের যুবকরা রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য নেতৃত্বে আসবেন বা আসতে পারেন।আমি ও আমার আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার মাধ্যমে আজ আমাদের পূর্বপুরুষদের সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।

দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় একনায়কতন্ত্রের মতো সরকার প্রধান হিসেবে বা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে যাবতীয় সিদ্ধান্ত প্রথমে মন্ত্রীসভার বৈঠকে নেওয়া হয়। বর্তমানের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের মাধ্যমে গ্রহণ করবেন। আমি যেহেতু উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য, তাই আমার মন্ত্রণালয়েরও যে কোনো সিদ্ধান্ত পরিষদের বৈঠকে নিতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে আমি শুধু আমার দপ্তরে বাস্তবায়ন করব। সংবিধানের ৫৫ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে পুরো মন্ত্রিসভা তাঁদের কর্মের জন্য যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকেন, এখানে একক দায়িত্বশীলতার কোনো বিধান নেই। এখন যেহেতু সংসদ কার্যকর নেই, আমরা বাংলাদেশের জনগণের নিকট আমাদের কর্মের জন্য দায়ী থাকব। তাই ইচ্ছা করলেই আমি একা কিছুই করতে পারবো না। মন্ত্রণালয়ও যখন তার নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করবে, তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই কাজ করা হয়। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি মন্ত্রণালয় পরিচালিত হয়, যেখানে অনেক অভিজ্ঞ, জ্ঞানী-গুণী মানুষের সম্মিলন থাকে। তাই আমি বয়সে তরুণ হলেও, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কম থাকলেও সততা, নৈতিকতা ও দেশপ্রেম দিয়ে সবাইকে নিয়ে দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারব। আমার বিশ্বাস, আমাদের ব্যত্যয় হবে না। তারপরেও যদি আমরা ভুল করি বা আমি ভুল করি, আপনারা সাংবাদিকরা গণতান্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আপনাদের কলম এখন স্বাধীন, আমার তুমুল সমালোচনা করবেন, ভুল ধরিয়ে দেবেন ও সংশোধনের পরামর্শ দেবেন। এই মন্ত্রণালয় আমার একার নয়, এই মন্ত্রণালয়ের মালিক এ দেশের আপামর জনসাধারণ। তাঁদের পক্ষ থেকে আমি শুধু দায়িত্ব পালন করব। আমার বিশ্বাস আপনারা যদি সকলে সহযোগিতা করেন আমরা এই মন্ত্রণালয়কে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হব। তরুণ তুর্কী এই উপদেষ্টার সাবলীল উত্তর শুনে সম্মেলন কক্ষের সবাই শুনশান নিরব হয়ে গেলেন।

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার আগে, সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার যে প্রতিযোগিতা ছিল তাতে অনেকটাই ভাটা পড়লো। কেউ কোনো নতুন করে প্রশ্ন করছে না। এবার উপদেষ্টা মহোদয় নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের আর কারও কোনো প্রশ্ন আছে কি?
একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে করতে এক সাংবাদিক বললেন আমার একটা প্রশ্ন আছে।
উপদেষ্টা মহোদয় বললেন, বলুন।
এবার প্রশ্ন কর্তা সাংবাদিক বললেন, প্রশ্নটি আসলে আমার নয়। অনেকে সমালোচনা করে বলেন যে, আপনি বয়সে অনেক তরুণ। আপনার মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা বয়সে আপনার অনেক সিনিয়র। তাঁরা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আপনাকে স্যার সম্বোধন করতে তাঁরা ইতস্তত বোধ করবেন কি না বা আপনি বিব্রত হবেন কি না?

এবারও খুব ঠান্ডা মাথায় উপদেষ্টা মহোদয় বললেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ আমাকে স্যার সম্বোধন করতে ইতস্তত বোধ করবেন কি না তার উত্তর আমি দিতে পারবো না। এটা তাঁরাই জানেন। তবে আমার জানামতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থায় ব্যক্তি মানুষকে আসলে সালাম বা স্যার বলে সম্বোধন করা হয় না। এটা করা হয় মূলত পদ বা পদমর্যাদা কে। সহজ কথায় বললে চেয়ার কে। চেয়ারে যিনি বসবেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাঁকেই সম্মান করবেন। এক্ষেত্রে পদের অধিকারী ব্যক্তির ব্যক্তিগত পরিচয় ও যোগ্যতা বিচার করা হয় না। আপনি যদি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্ট নিয়ে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর প্রকাশ করা রায়টি দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন, সেখানে কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে পদের নাম। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ আমাকে ব্যক্তি আসিফ মাহমুদ জুয়েল ভূঁইয়া হিসাবে সম্মান করেন না, সম্মান করেন আমার পদের জন্য।

এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা মহোদয় আবার দেখা হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন। আমি পুরো সংবাদ সম্মেলনটি দেখছিলাম, মনে হচ্ছিল ফখরুদ্দিন সরকারের আইন উপদেষ্টা বর্ষিয়ান আইনজ্ঞ প্রয়াত ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সংবাদ সম্মেলন দেখছি। একজন ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আইনের পয়েন্ট ধরে মেয়েদের শিক্ষার্থী আমি ধরে যেভাবে উত্তর দিয়েছিলেন তা আমাকে বিমোহিত করেছিল। আমি আনন্দের আতিশয্যে দুই হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে উঁচিয়ে চিৎকার করছিলাম, এমন সময় আমার পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রী চিৎকার করে উঠলো যে, আমার হাতের ধাক্কা নাকি আমার সদ্য জন্ম নেওয়া নবজাতক মেয়ের গায়ে লেগেছে। মেয়েও চিৎকার করে উঠলো। আমার ঘুম ভেঙে গেল, পাশে বসে সদ্য ঘুম ভাঙ্গা স্ত্রী খিস্তিখেউড় করতে লাগলেন। আমার সেদিকে খুব একটা খেয়াল নেই, অনেকটা সিলন চায়ের সেই বিজ্ঞাপনটির মতো কাপ শেষ তবুও রেস রয়ে যায়। ঘুম ভাঙার কারণে আমার স্বপ্ন ভেঙেছে, তবুও তার রেশ নিয়ে বসে আছি।

লেখক:
আরিফুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ;
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, (বিইউবিটি)।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 shomoyeralo24
Site Customized By NewsTech.Com