নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) প্রধান ভবনের অডিটরিয়ামে আগামীকাল মঙ্গলবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সম্মেলনের ডাক দিয়েছে একটি গ্রুপ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক অফিস আদেশ জারি করেছেন ডিপিএইচই’র প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন। তবে এ সম্মেলনের আড়ালে একাধিক কু-মতলব রয়েছে বলে দাবি খোদ সংস্থাটিরই কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির দুটি গ্রুপ রয়েছে। এর একটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন আর সাধারণ সম্পাদক মো. মুক্তার আলী এবং অপরটির সভাপতি মো. বাদশা মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ হোসেন। এরমধ্যে মো. মোশারফ হোসেন ও মো. মুক্তার আলীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি আগামী ১৯ মার্চ সম্মেলন করার জন্য ডিপিএইচই’র প্রধান প্রকৌশলীর কাছে আবেদন করেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন সংস্থাটিতে কর্মরত প্রতি জেলা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য অনুমতি প্রদান করে একটি অফিস আদেশ জারি করেন। যার স্মারক নম্বর: ৪৬.০৩.০০০০.০০১.১৬.০৪৭.১৭.৬৭১২, তাং-১১/০৩/২০২৪ ইং।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সভাপতি (একাংশের) মো. বাদশা মিয়া এ ব্যাপারে বলেন, শুনেছি একটি গ্রুপ ১৯ মার্চ সম্মেলন ডেকেছে আর এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী একটি অফিস আদেশও জারি করেছেন। কিন্তু অফিস চলাকালীন সময়ে তিনি কিভাবে প্রতি জেলা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে সম্মেলনে উপস্থিতের অনুমতি দিলেন তা আমার বোধগম্য না। এছাড়া সকাল ৯টায় সম্মেলন শুরু হলে দূর জেলা থেকে যারা আসবেন তাদের অবশ্যই আগের দিন রওয়ানা দিতে হবে আবার সম্মেলন শেষ হবে ইফতারি শেষে ফলে তাদের কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে ফিরতে হবে পরের দিন রওয়ানা করে। এভাবে তিন দিন সেবাবঞ্চিত হবে বিভিন্ন জেলার সেবা প্রার্থীরা। সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটিয়ে এভাবে সম্মেলন করা বা অনুমতি দেয়া কতটুকু আইনসিদ্ধ তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
তবে এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সভাপতি (একাংশের) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর নির্দেশেই সম্মেলনের এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির এ সম্মেলনের ডাক দেয়া হয়েছে ডিপিএইচই’র প্রধান প্রকৌশলীর সরাসরি মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায়। অফিস চলাকালীন সময়ে সম্মেলন বে-আইনি জেনেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রধান প্রকৌশলী এতে অনুমতি দিয়েছেন। কারণ এ সম্মেলন থেকে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর কাছে প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেনের ভারপ্রাপ্ত থেকে চলতি দায়িত্বের দাবি তোলানো হবে।
পাশাপাশি যেহেতু তিনি আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সম্ভাব্য অবসরে যাবেন তাই তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করানোরও দাবি তোলানো হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। আর এসবই ডিপিএইচই’র প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেনের যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিএইচই’র একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেছেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইফতার পার্টি না করে সাধ্যমতো সেই অর্থ মানবসেবায় ব্যয় করতে বলেছেন তাই ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির এ সম্মেলনের নামে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছে। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে এমন সম্মেলন ঔদ্ধত্য দেখানোর শামিল। এ সম্মেলনটি শুধু ডিপিএইচই’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেনের ব্যক্তিস্বার্থে ও কু-মতলবের কারণেই ডাকা হয়েছে।
আবার এ সম্মেলন কাম ইফতার পার্টিতে প্রধান অতিথি করা হয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপিকে। সম্মেলন থেকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছে প্রধান প্রকৌশলীকে চলতি দায়িত্ব প্রদান ও তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধিরও দাবি জানানো হবে বলে সূত্র জানায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেনের কর্মকাল বৃদ্ধি কিংবা তাকে ভারপ্রাপ্ত থেকে চলতি দায়িত্ব দেয়ার দাবি এ সম্মেলন থেকে তুলবেন কিনা বা কেউ আপনাদের এমন দাবি করাচ্ছেন কিনা এমন জিজ্ঞাসায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সভাপতি (একাংশের) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘না এ রকম পরিকল্পনা নেই।’ অপর এক প্রশ্নে প্রধান প্রকৌশলী অফিস চলাকালীন সময়ে আপনাদের সম্মেলনের অনুমতি দিয়েছেন আর এতে সম্মেলনে যোগদানকারী সদস্যরা তিন কর্মদিবস নাগরিকসেবা দিতে পারবেন না অর্থাৎ সরকারি কাজের ব্যাঘাত হবে কি না এমন জিজ্ঞাসায় তিনি বলেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়ের (স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম) প্রোগ্রামে আছি।
আপনার কথা পুরো বুঝতে পারছি না, আপনি পরে কথা বলেন।’ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতির সভাপতি (একাংশের) মো. বাদশা মিয়া এ ব্যাপারে বলেন, নাগরিকসেবা বঞ্চিত করে কর্মকালীন সময়ে সম্মেলন একদমই সমীচীন নয়। তাছাড়া এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অনুমতি দেয়াটাও দুরভিসন্ধিমূলক বলে অনেকেই মনে করেন। বে-আইনি জেনেও প্রধান প্রকৌশলী বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে এমন অনুমতি দিয়ে থাকতে পারেন।
প্রধান প্রকৌশলীর এমন অনুমতির কারণে অনেক জেলার সব কর্মকর্তাই চলে আসবে। এমন অনুমতিতে তিন দিন প্রায় সব জেলার অফিসগুলোতে নাগরিকসেবা বন্ধ থাকবে। আমাদের সম্মেলন করার অধিকার আছে তবে তা সরকারি কাজ বাদ দিয়ে নয়। এটা কি শুধুই সম্মেলন নাকি ইফতার পার্টিও হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ, শুনেছি সকাল ৯টায় সম্মেলন শুরু আর ইফতার করে তারপর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ইফতার কার্যক্রম করার ইচ্ছা থাকলেও তা বন্ধ করে দিয়েছি। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলী এভাবে অফিস কার্যক্রম বাদ দিয়ে সম্মেলনের অনুমতি দিতে পারেন না বলে আমি মনে করি। আপনারা কি শুধুই সম্মেলন নাকি ইফতার পার্টিও করবে।
Leave a Reply