1. asaduzzamann046@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@shomoyeralo24.com : Shomoyer Alo : Shomoyer Alo
শিরোনাম :
চাহিদামতো ঘুষের টাকা নিয়েও কাজ করে না ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ছাগলনাইয়া মৌরী নদীরপারে অপহৃত জসিম উদ্দিন চৌধুরীর লাশ উদ্ধার ইটনায় সেনাবাহিনীর হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার, সংঘর্ষে আহত ১ শেখ হাসিনা কি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আইন কী বলে জুডিশিয়াল ক্যু’র মাধ্যমে ড. ইউনূস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা যেত কী: আইন ও বাস্তবতার বয়ান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মাস্টাররুলে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়িত্বকরণে মানববন্ধন মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলায় বিএনপি নেতার বাড়ীতে যৌথবাহিনী হামলা ও মামলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, আইন কী বলে মুন্সিগঞ্জ টুংগিবাড়ী উপজেলায় বিএনপি নেতা দোলন ও কুমারী মুসরাত গুমের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফেনী সদর উপজেলা মধুপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারে হামলা ও ডাকাতি

পড়ালেখা ভুলে যাওয়া রোগ : সমাধানে কিংবদন্তি শিক্ষাবিদদের পরামর্শ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২৩৫৬ বার

ঘটনার দিন পরপর দুটো ক্লাস ছিলো। প্রায় বিরতিহীন ভাবে তিন ঘণ্টা ক্লাসে লেকচার দিতে হয়েছে। ক্লাসের পুরো সময় জুড়ে হেঁটে হেঁটে উচ্চস্বরে পড়ানোর অভ্যাস আমার। আগে খুব একটা অসুবিধে হতো না, এখন টানা দুটো ক্লাস নিলে একটু ক্লান্তি লাগে। ক্লাস শেষ করে এসে চেম্বারের আর্মচেয়ারে আধা শোয়া অবস্থায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিচ্ছি। আমার এক ছাত্রের সালাম শুনে দু চোখের পাতা আলাদা করলাম। ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও পড়ুয়া, ক্লাসেও তার অবস্থান একদম উপরের দিকে। বিনয়ের সাথে আমার কাছে একটু সময় চাইলো, সে একটা বিষয় কথা বলতে চায়। আমি তার দিকে মনোযোগ দিতে, চেয়ার সোজা করে ভালোভাবে বসলাম। তার কথার সারমর্ম হল, সে অনেক পড়াশোনা করার পরেও তার তেমন কিছু মনে থাকে না। সে যে পরিমাণ পরিশ্রম করে তাতে তার আরো ভালো করা উচিত এবং আরো বেশি পড়া মনে থাকা উচিত। সে জানতে চায়, পড়াশোনা মনে রাখার ব্যাপারে আমার কোনো পরামর্শ আছে কিনা? তার সাথে যে বিষয়গুলো আমি শেয়ার করেছিলাম, সেগুলোই এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।

আমার ছাত্রটি এসে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেও, এই একই সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। অনেকে জিজ্ঞেস করেন না বা জিজ্ঞেস করার সাহস পান না। এই বিষয়টি নিয়ে আমি আগেও অনেক চিন্তা করেছি , আমার মনে হয়েছে নিয়মিত পড়ালেখা করে এমন ছাত্রের সংখ্যাতো দেশে কম নয়। এই পড়ুয়াদের সবচেয়ে বড় শত্রু কে? মনে হয় যে কেউ বিশ্বাস করবে, পড়া ভুলে যাওয়া। পড়ালেখার জন্য যারা কম সময় ব্যয় করে তাদের ক্ষেত্রে না হয় মেনে নেওয়া যায় যে, কম পড়ে তাই কম মনে থাকে। কিন্তু যখন অনেক পড়ুয়াদের থেকে অভিযোগ আসে তাদের পড়া মনে থাকেনা, তখন সেটি চিন্তার বিষয়।

এ বিষয়টি নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনার ফলাফল হলো এই যে, আপনি যতোই পড়ুয়া হোন না কেনো একজন ব্যক্তির জীবনে পড়া সব কিছুই মনে রাখা সম্ভব নয়। ভুলে যাবার পর যা মনে থাকে সেটাই আসল পড়া। এই ক্ষেত্রে যে যতো পড়বে তার ততো বেশি মনে থাকবে।

সে যাই হোক এবার আমার ছাত্রের আসল প্রশ্নে আসি, সবাইতো কম-বেশি পড়ালেখা করে তাহলে এজন্য কী কোনো কার্যকর পদ্ধতি বা প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের কোনো পরামর্শ নেই? এককথায় উত্তর হচ্ছে আছে। তাঁরা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেটা কেউ অনুসরণ করলে কম সময় পড়ুক বা বেশি সময় পড়ুক সেটা বড়ো বিষয় নয়, পড়াটা তার মেমরিতে গেঁথে যাবে। এবং সেটাই হবে একজন পড়ুয়ার সবচেয়ে বড়ো সফলতা। আমরা এখানে ফলপ্রসূ পড়ালেখার পদ্ধতির বিষয়ে তিনজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদের পরামর্শ তুলে ধরবো।

আমরা প্রথমেই আলোচনা করবো প্রখ্যাত শিক্ষাবিষয়ক দার্শনিক, আমেরিকার বিখ্যাত Ohio State University’র গবেষক ও প্রফেসর Mr. Francis Pleasant Robinson’র কার্যকর শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে। মি. রবিনসন এই পদ্ধতিটি ১৯৪৬ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “Effective Study” তে ব্যাখ্যা করেন। এই পদ্ধতিটি “SQRRR or SQ3R বা পাঁচ স্তরের Survey, Question, Read, Recite and Review শিক্ষাপদ্ধতি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতিতে পড়াকে পাঁচটি স্তরে ভাগকরে পড়তে হয়।

প্রথমে S= Survey, পড়তে বসার আগে যা পড়বেন তাতে দ্রুত একবার চোখ বুলানোই সার্ভে। এক্ষেত্রে যে অধ্যায়টি পড়বেন তার শিরোনাম, উপশিরোনাম, ছবি, ক্যাপশন, গ্রাফ, ডায়াগ্রামগুলোতে চোখ বুলান। সার্ভের মধ্য দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন কী পড়তে যাচ্ছেন। এটা হলো আপনার ঐ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা।

দ্বিতীয় হলো Q=Question, চ্যাপ্টারের শিরোনামগুলোকে প্রশ্নে রূপান্তরিত করুন। কী, কে, কেন, কীভাবে, কখন, অথবা তুলনা করো, পার্থক্য করো, বর্ণনা করো, তালিকা করো ইত্যাদি পরিভাষায় এই প্রশ্ন করা যেতে পারে। আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবার জন্যে এবার (R= Read) পড়া শুরু করুন। প্রশ্ন করে তার উত্তর পেলে ঐ বিষয়ে আপনার ধারণা পরিষ্কার হবে। প্রশ্ন বিহীন শুধুই উত্তর পড়লে আপনি পূর্ণাঙ্গ ধারণা নাও পেতে পারেন। এবার দ্বিতীয় R= Recite, যা পড়েছেন সেগুলোকে জোরে জোরে আওড়ানোই রিসাইট। পড়া নিজেকে শোনান। ঠিকমতো কি হচ্ছে? না হলে আবার পড়ুন। এতে মনে রাখা সহজ হবে।

এবার তৃতীয় বা সর্বশেষ R= Review এতক্ষণ যা পড়লেন তা বারবার ঝালাই করাই হলো রিভিউ। নিয়মিত বিরতিতে এই রিভিউ বা রিভিশন দিতে হবে। পড়ালেখার ক্ষেত্রে যেকেউ এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সে কম পড়ুক বা বেশি পড়ুক যতোটুকু পড়বে তা মনে থাকবেই।

এবার বলবো বাংলাদেশের এক কিংবদন্তি শিক্ষকের পরামর্শ। যিনি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। যাকে নিয়ে তাঁরই শিষ্য আহমদ ছফা লিখেছেন কালজয়ী এক গ্রন্থ “যদ্যপি আমার গুরু”। আমি বলছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবদন্তি জাতীয় অধ্যাপক ড. আব্দুর রাজ্জাকের কথা। জনাব ছফার মতে তাঁর গুরু অনেকটা ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন। বইপড়া নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিলো তা তাঁর নিজের ভাষাতেই শোনা যাক-“পড়ার কাজটি অইল অন্যরকম। আপনে যখন মনে করলেন, কোনো বই পইড়্যা ফেলাইলেন, নিজেরে জিগাইবেন যে বইটা পড়ছেন, নিজের ভাষায় বইটা আবার লিখতে পারবেন কিনা। আপনার ভাষার জোর লেখকের মত শক্তিশালী না অইতে পারে, আপনের শব্দভান্ডার সামান্য অইতে পারে, তথাপি যদি মনে মনে আসল জিনিসটা রিপ্রোডিউস না করবার পারেন, ধইরা নিবেন, আপনের পড়া অয় নাই।”

জনাব রাজ্জাকের মতে আপনি যা কিছুই পড়েন না কেনো, আপনাকে অনুধাবন করতে হবে আপনি কী পড়লেন। যদি পড়া শেষে পঠিত বিষয়টি নিজের মতো করে লেখা যায় তাহলেই আপনার পড়া ফলপ্রসূ হলো অন্যথায় নয়। অন্য এক মনীষী বলেছিলেন, ত্রিশবার পড়ার চেয়ে একবার লেখা অনেক কার্যকরী।

সবশেষে বলবো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের এমেরিটাস প্রফেসর ড. অরুণ কুমার বসাক স্যারের পরামর্শ, যা তাঁকে তাঁর শিক্ষক পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক মাখন লাল চক্রবর্তী দিয়েছিলেন। ড. বসাকের মতে তিনি বিলেত আমেরিকাতেও তাঁর কলেজ শিক্ষক মাখন লাল চক্রবর্তীর মতো এতো ভালো শিক্ষক দেখেননি। তাঁর পরামর্শও অনেকটা রাজ্জাক স্যারের কথার সাথে মিলে যায়। বলে রাখা ভালো ড. অরুণ কুমার বসাক বাংলাদেশের একমাত্র পদার্থ বিজ্ঞানের এমেরিটাস প্রফেসর।

তাঁর স্যার তাঁকে বলেছিলেন “একটানা পড়োনা, একটা অধ্যায় পড়া শেষ করে একটা বিরতি নাও। নির্জন জায়গায় বসো, চোখ বন্ধ করে স্মরণ করার চেষ্টা করো আগে যা পড়লে। প্রথমে পারবেনা এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা যখন নিয়মিত করবে দেখবে তুমি পুরোটাই বদলে গেছো। ” তিনি চিন্তার জায়গাটা প্রসারিত করতে বলেছেন।

জনাব বসাক বলেন আমি যখন ইংল্যান্ডে পিএইচডি করতে গেলাম তখনও এই একই পদ্ধতিতে পড়তাম। ফলাফল কি জানেন? তিনি ১০০ তে ১০০ পেয়েছিলেন। তাঁর প্রফেসর তাঁকে পরীক্ষার খাতাটা দিয়ে বলেছিলেন, এটা রেখে দিও তোমার পরবর্তী প্রজন্মকে দেখানোর জন্য। বুঝাই যাচ্ছে পদ্ধতিটা কতো কার্যকর। এখনো যারা পড়ালেখা বেশি ভুলে যাচ্ছেন বা যথার্থ ফলাফল পাচ্ছেন না তারা উপরের পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। সফল হবেন নিশ্চয়ই। সবার জন্য শুভকামনা রইল।

লেখক:
আরিফুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ;
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 shomoyeralo24
Site Customized By NewsTech.Com