1. asaduzzamann046@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@shomoyeralo24.com : Shomoyer Alo : Shomoyer Alo
শিরোনাম :
চাহিদামতো ঘুষের টাকা নিয়েও কাজ করে না ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ছাগলনাইয়া মৌরী নদীরপারে অপহৃত জসিম উদ্দিন চৌধুরীর লাশ উদ্ধার ইটনায় সেনাবাহিনীর হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার, সংঘর্ষে আহত ১ শেখ হাসিনা কি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আইন কী বলে জুডিশিয়াল ক্যু’র মাধ্যমে ড. ইউনূস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা যেত কী: আইন ও বাস্তবতার বয়ান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মাস্টাররুলে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়িত্বকরণে মানববন্ধন মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলায় বিএনপি নেতার বাড়ীতে যৌথবাহিনী হামলা ও মামলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, আইন কী বলে মুন্সিগঞ্জ টুংগিবাড়ী উপজেলায় বিএনপি নেতা দোলন ও কুমারী মুসরাত গুমের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফেনী সদর উপজেলা মধুপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারে হামলা ও ডাকাতি

বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, আইন কী বলে

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪
  • ৯৫১ বার

বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ না নেওয়া পর্যন্ত কে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন, আইন কী বলে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণবিপ্লবের পর হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন নির্বাহী আদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন এবং এর দুইদিন পরে অর্থাৎ ৮ আগস্ট প্রফেসর ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টারা শফত গ্রহণ করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে গত কয়েকদিনে বিভিন্ন সংবিধানিক, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানগণ পদত্যাগের হিড়িক শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যগণ পদত্যাগ করেছেন। অনেক সংবিধানিক পদের কর্তা ব্যক্তিগণ পদত্যাগপত্র জমা না দিলেও তাঁদের অনেকেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অফিস করছেন না। হয়তো তাঁদের অনেকেই পদত্যাগ করবেন বা দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত থাকলে সরকার তাঁদের পদগুলোকে শুন্য ঘোষণা করবেন। হাসিনা সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবিধানিক পদগুলোর মধ্যে একমাত্র রাষ্ট্রপতিই দৃশ্যমানভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে রাষ্ট্রপতি তাঁর যাবতীয় দায়িত্ব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের পরামর্শে করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করুক আর না করুক বাস্তবে তাঁর কিছুই করার নেই, তিনি তাঁর পদে থাকতে হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর পরামর্শই তাঁকে মানতে হবে। আমরা জানি, বর্তমান ২২তম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে সদ্য সাবেক হাসিনা সরকার নিয়োগ দেন এবং তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর অত্যন্ত আনুগত্যশীল। তাঁর চোখের সামনেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো। স্বভাবতই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নিকট শপথ নিয়েছিলেন তখন তিনি যে হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন এখন আর তাঁকে তেমনটি দেখা যায় না। তাই অনেকে মজা করে বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতির অবস্থা অনেকটা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’র মতো অথবা ‘পড়েছি মোগলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে।’ কেউ কেউ মজা করে জ্যোতি সিনেমায় গাওয়া কিশোর কুমারের গান ‘পারিনা সইতে, না পারি কইতে, গানে কন্ঠ মিলান। বাস্তবে আমরা মানুষ বড়ই অদ্ভুত, বিপদের দিনে কেউ পাশে না থাকলেও মজা নিতে পিছপা হইনা।

সে যাই হোক, অনেকে প্রশ্ন করেন এখন তো দেশে প্রধানমন্ত্রী নেই (প্রধান উপদেষ্টার পদমর্যাদা যে প্রধানমন্ত্রীর সমান এটা অনেকেই জানেন না), রাষ্ট্রপতি সংসদও ভেঙে দিয়েছেন, এ অবস্থায় যদি তিনি পদত্যাগ করতে চান, তাহলে তিনি কার নিকট পদত্যাগ করবেন? পাশাপাশি তাঁরা আরও একটি প্রশ্ন করেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে নতুন রাষ্ট্রপতি শপথ না নেওয়া পর্যন্ত ওই পদে কে দায়িত্ব পালন করবেন? আমরা আজকের আলোচনায় এই দুটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।

আমরা প্রথমেই আলোচনা করব, যদি রাষ্ট্রপতি এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে চান, তিনি কার নিকট পদত্যাগ করবেন এই প্রশ্নের। পদত্যাগ এর ক্ষেত্রে একটি সাধারণ নিয়ম হলো, যাকে যিনি নিয়োগ দিয়েছেন তিনি তাঁর নিকট পদত্যাগ করবেন। সংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ, রাষ্ট্রপতি পদে সরাসরি কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া যায় না, রাষ্ট্রপতি পদের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল সাধারণত রাষ্ট্রপতি পদে একজনকে মনোনয়ন দেন। তারপর তিনি সংসদ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতি হন। আমরা হয়তো বর্তমানে রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ ভোটের নির্বাচন দেখিনা কারণ শুধুমাত্র ক্ষমতাসীন দল রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেন, যেহেতু বিরোধী দলের প্রার্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না তাই তাঁরা প্রার্থীও ঘোষণা করেন না। অন্য প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে একক প্রার্থী হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। উল্লিখিত বিধান আপনারা ইচ্ছা করলে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ তে দেখতে পারেন। তাই অন্যান্য সংবিধানিক পদের নিয়োগ, আর রাষ্ট্রপতি পদের নিয়োগ এক নয়। অন্য পদধারীরা যেমন নিয়োগ পাওয়ার পরে নির্ধারিত শপথ নেন সেখানে রাষ্ট্রপতি দলীয় মনোনয়নের পর নির্বাচিত হয়ে তারপরে পদের শপথ নেন। ৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্রপতি পদের শপথ পরিচালনার দায়িত্ব ছিল প্রধান বিচারপতির, বর্তমানে ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনীর পর রাষ্ট্রপতির শপথ পরিচালনার দায়িত্ব স্পিকারের নিকট অর্পণ করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানে রাষ্ট্রপতি তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নিকট শপথ নেন।

এবার আসি পদত্যাগের প্রশ্ন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৫০(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। বর্ণিত অনুচ্ছেদ-এর অর্থ হলো, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন যদি পদত্যাগ করতে চান তাহলে তিনি জাতীয় সংসদের স্পিকারের নিকট পত্রযোগে তাঁর পদত্যাগ পত্র পেশ করবেন। এখন প্রশ্ন হতে পারে যে, ৬ আগস্ট, ২০২৪ বর্তমান রাষ্ট্রপতি নিজেই জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় ভেঙে দেওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বর্তমানে স্পিকার আছেন কি না। এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হল, হ্যাঁ তিনি এখনো স্পিকার আছেন। কিন্তু কিভাবে, যদি আমরা সংবিধানের ৭৪(৬) অনুচ্ছেদ দেখি সেখানে বলা আছে ‘ এই অনুচ্ছেদের (২) দফার বিধানাবলী সত্ত্বেও ক্ষেত্রমত স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাঁহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রহিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে।’ উল্লিখিত অনুচ্ছেদের বিধানানুসারে, সংসদ ভেঙে দেওয়ার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার বর্তমানে সংসদ সদস্য না থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আয়োজনে পরবর্তী নির্বাচনের পরে যাঁরা সরকার গঠন করবেন (তা ২ বা ৩ বছর পরে হলেও), সেই সরকার তাঁদের প্রথম অধিবেশনে স্পিকার নিয়োগ দানের পূর্ব পর্যন্ত ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে বহাল আছে বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে তাঁর পদত্যাগপত্র ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নিকটই পেশ করতে হবে।

এক্ষেত্রেও একটি সম্পূরক প্রশ্ন থাকে যে, সংসদ ভেঙে যাওয়া অবস্থায় সাধারণত ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নিয়মিত অফিস করেন না বা অফিসেই আসবেন না। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবে কে? এ বিষয়ে আইনবিদেরা একমত এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে যে সাংবিধানিক পদধারী কারও পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা বা না করার বিষয় নেই। রাষ্ট্রপতি নিজে স্বীয় পদত্যাগ করেছেন এবং তা পত্রযোগে স্পিকারের দপ্তরে পাঠিয়েছেন, পত্রটি স্পিকারের দপ্তরে পৌঁছেছে, পদত্যাগ করার জন্য ইহাই যথেষ্ট হবে। এক্ষেত্রে পদত্যাগপত্র গ্রহণ বা গ্রহণ না করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি স্পষ্ট হলো যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নিকট পদত্যাগ করতে রাষ্ট্রপতির কোনো আইনগত বাধা নেই। এখন আমরা আলোচনা করব আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ওই পদে দায়িত্ব পালন করবেন কে?
এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে দিতে পারি, ৫৪ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে ‘রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।’ এই নিবন্ধের প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমরা স্পষ্ট করেছি যে, ভেঙে দেওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী যেহেতু এখনো সাংবিধানিকভাবে স্পিকার আছেন সেহেতু বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন কোনো কারণে পদত্যাগ করলে নতুন রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দেয় এবং সেটি যদি একক ব্যক্তির মনোনয়ন হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনার তাঁকে ভোটের আয়োজন না করেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যখন তাঁর পদে শপথ গ্রহণ করবেন তখন থেকেই স্পিকারের যোগ্যতায় রাষ্ট্রপতি হওয়া ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন আপনা-আপনি শেষ হয়ে যাবে।

লেখক:
আরিফুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ;
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, (বিইউবিটি)।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 shomoyeralo24
Site Customized By NewsTech.Com