বাজিতপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে সরকারি জলমহালের মাছ নিয়ে আপন চাচা ভাতিজার মধ্যে চলছে দ্বন্ধ।জানা যায়, উপজেলার পৌরসদরের পশ্চিম মথুরাপুর এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জুর আপন ছোট ভাই আবু বকর ছিদ্দিক ডালহৌসি (৬১) ও ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান মামুনের (৩৮) মধ্যে নদীর মাছ ধরা নিয়ে দ্বন্ধ চলছে।
এতোদিন বিষয়টি গোপন থাকলেও সম্প্রতি চাচা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করায় বিষয়টি সামনে এসেছে। দুজনেই বিএনপির প্রভাবশালী নেতা। তারা একই পরিবারের সদস্য হওয়ায় মন্তব্য করতে রাজি নন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে তারা বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে দেখছেন। চাচা ডালহৌসি প্রশাসনের কাছে দ্বন্ধের সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন।অভিযোগসূত্রে জানা যায়, বেংলা চরাবাদা সরকারি জলমহালটি কাইমেরবালী জেলে মৎস সমবায় সমিতি ৬ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে লীজ পায়। পরবর্তীতে সমিতির কাছ থেকে চাচা ও ভাতিজা যৌথভাবে জলমহালটির লীজ নেয়।
চাচার অভিযোগ, যৌথভাবে লীজ নেওয়ার পরেও ভাতিজা মামুন একাই ভোগদখল করছে। তাকে তার প্রাপ্যতা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।তবে ভাতিজা মামুনের দাবি, দুজনের নামে লীজ নেওয়ার একটি চুক্তিপত্র থাকলেও তার কোনো বৈধতা নেই। আইনগতভাবে চুক্তিপত্রটি বৈধ নয়। এছাড়া চাচার কোনো ইনভেস্টমেন্ট নেই জলমহালটিতে। তারপরেও চাচাকে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মতো দিয়েছে।জলমহালটির মূল লীজ গ্রহীতা শ্রী দ্বীপক চন্দ্র দাসের কাছে ইনভেস্টমেন্টের বিষয়টি জানতে চাইলে তারও ভাষ্য চাচা ডালহৌসির কোনো ইনভেস্টমেন্ট নাই।
জানা যায়, ১২ জানুয়ারি দুপুরের দিকে নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরেন চাচা ডালহৌসি ও তার লোকজন। মাছ ভর্তি ট্রলার নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী উপজেলা কুলিয়ারচর ঘাটে যাওয়ার সময় নদী পথে ভাতিজা মামুন ও তার লোকজন পিছু নেয়। পরে কুলিয়ারচর ঘাট থেকেই চাচার মাছ ভর্তি ট্রলার ফেরত নিয়ে আসে ভাতিজা। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়। এতে একজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ারও খবর পাওয়া যায়।
কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, মাছ নিয়ে চাচা ভাতিজার দ্বন্ধ, একজনে নিয়ে আসছে আরেকজনে নিয়ে গেছে। পুলিশ সময়মতো না পৌছালে বড় ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হতো।চাচার দাবি, মামুন তার লোকজন নিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে। তার অংশ ঠিকমতো বুঝিয়ে দেয় না। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ টাকার মতো মাছ বিক্রি করলেও ২ লাখ টাকার মতো তাকে দিয়েছে এমন অভিযোগ তার। ঘটনার দিন তার সাথে জলমহালটির সভাপতিও ছিলেন বলে দাবি তার। তবে সভাপতি শ্রী দ্বীপক চন্দ্র দাসের দাবি তাকে জোর করে নেওয়া হয়েছে।
“বেংলা চরাবাদ জলমহাল লীজের চুক্তিপত্র” নামে তিন ফর্দের ১০০ টাকা করে ৩০০ টাকার একটি ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, ১ম পক্ষ লীজ গ্রহিতার জায়গায় চাচা আবু বকর ছিদ্দিক ও ভাতিজা মোস্তাফিজুর রহমানের নাম, ২য় পক্ষ লীজ দাতা শ্রী দ্বীপক চন্দ্র দাস ও সুজন চন্দ্র দাসের নাম রয়েছে। আর্থিক সমস্যার কারন উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ১ম পক্ষ চাচা ও ভাতিজার সাথে জলমহালটি পরিচালনার জন্য ২য় পক্ষ দ্বীপক ও সুজন চুক্তিপত্রটি করেন।জলমহালের লীজের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রটির কোনো ভ্যালু নেই এমন দাবি ভাতিজা মামুন করলেও চাচার পরেই তার নামে স্বাক্ষর রয়েছে।
চুক্তিপত্রটিতে লেখা রয়েছে, ৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে সম্পাদিত ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জেলা কারেক্টর, কিশোরগঞ্জ হতে ১৪৩১ থেকে ১৪৩৬ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ৬ বছরের জন্য বেংলা চরাবাদা জলমহালটি লীজ প্রাপ্ত হয় শ্রী দ্বীপক চন্দ্র দাস।পাটুলি, কাইমের বাউলী, মাইজচর ও দিঘীরপাড় বস্তি মৌজায় ১৭ দাগে মোট ১৩৬৩ একর ৫৭ শতাংশ এলাকা নিয়ে জলমহালটি গঠিত।
মামুনের দাবি ৫ আগস্টের পর এমন পরিস্থিতি হয়েছিলো যেখানে চাচাকে সাথে নিয়েই চুক্তিপত্রটি করতে হয়েছে। তবে সব টাকা নিজেই দিয়েছে দ্বীপক দাসকে। চাচার কোনো ইনভেস্টমেন্ট নেই।তবে চাচা ডালহৌসির দাবি তিনিই বেশি টাকা দিয়েছেন এখন তাকে কৌশলে ঠকানো হচ্ছে। তিনি আরো দাবি করেন, চুক্তিপত্রে সাক্ষীসহ লীজ দাতা ও গ্রহীতার স্বাক্ষর রয়েছে। দ্বীপককে যদি টাকা না দিতাম তাহলে চুক্তিপত্রে আমার নাম প্রথমে লিখা কেনো এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি আরো বলেন, দ্বীপক হিন্দু লোক, তাকে ভয় দেখিয়ে অস্বীকার করানো হচ্ছে। দ্বীপক অস্বীকার করলে কি হবে তারতো চুক্তিপত্র আছে এমনটিও দাবি করেন তিনি।
স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন যদি সত্য মিথ্যা যাচাইয়ে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। চুক্তিপত্রটির আইনি কোনো ভ্যালু আছে কি না, এটি জাল কি না, এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার আহ্বান সচেতন মহলের।
Leave a Reply