৩১ জানুয়ারি ১৯৬৭ সাল, তখন শীতকাল। মাঘ মাসের কনকনে শীতে উত্তরের প্রবেশদ্বার বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম। স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে দেশের পরিস্থিতি কিছুটা থমথমে থাকলেও তার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে দুরন্তপনায়। শিক্ষাজীবনে তিনি করপুর বাই-ল্যাটারাল উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন।
তিনি বর্তমান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৯ সালে মেধাতালিকায় প্রথম শ্রেণীতে ২য় হিসাবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি লাভ করেন। এ ছাড়াও ২০০৯ সালে তিনি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ১৫ তম বিসিএস (পাবলিক ওয়ার্কস) ক্যাডারের মেধা তালিকায় প্রথম হিসাবে ১৯৯৫ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৯৮ সালে সালে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, ২০০৭ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী, ২০১৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং ২০১৮ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর ২০১৯ সাল থেকে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট,গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
দীর্ঘ কর্মজীবনে সততা, দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে সরকারি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি চাকুরি ক্ষেত্রে অনেক সুনাম অর্জন করেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী উদ্ভাবনের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের সুরক্ষা হচ্ছে অন্যদিকে আমাদের কৃষিজমির উপরিভাগ তথা টপ সয়েল রক্ষা পাচ্ছে । এছাড়াও অত্র প্রতিষ্ঠানে গবেষণার পাশাপাশি উদ্ভাবিত নির্মাণ উপকরণ/প্রযুক্তি বিপণন ও সম্প্রসারণ, ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে গৃহায়ন ও নির্মাণ বিষয়ক পরামর্শ সেবা প্রদান করে থাকে । নির্মাণ শিল্পের মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে এইচবিআরআই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব ও টেকসই আবাসন নির্মাণ কার্যক্রমেও এই প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এদিকে প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনায় প্রথম স্থান অর্জন করে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ১১টি অধিদপ্তর ও সংস্থা সমূহের মধ্যে ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনার সার্বিক মূল্যায়নে (৫০ নম্বরের ভিত্তিতে ) ১১টি দপ্তর সংস্থার মধ্যে গত ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট ৪৬.৮০ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে দেশজ নির্মাণ উপকরণ ও সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও ব্যয়সাশ্রয়ী অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৩ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট নামে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করে।
১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রণীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লিখিত সংবিধান। সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হিসেবে নাগরিকদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারনের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও জাতির পিতা সংবিধানের ১৬ নং অনুচ্ছেদে নগর ও গ্রামের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার যুক্ত করেছিলেন।
এরই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ৩.১০ নং অনুচ্ছেদে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন । প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Leave a Reply