ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ
পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করা থেকে শুরু করে, জমি দখল ও উপজেলায় দলীয় ক্রন্দন সৃষ্টির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে পাংশার এই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত ৯ ডিসেম্বর বিকেলে ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মসূচীতে তার ইন্ধনে/তার কর্মীরা বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. এএফএম শফিউদ্দিন পাতাসহ তিনজনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। মারধরের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই রাতেই পাংশা থানায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন মারধরের শিকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. এএফএম শফিউদ্দিন পাতা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজ সেসময় বলেন, বিক্ষোভ সমাবেশে হামলার ঘটনা উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের পূর্বপরিকল্পিত। অন্যদিকে এ ঘটনায় মারধরের শিকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিউদ্দিন পাতাকেই প্রধান আসামী করে পালটা মামলা দায়ের করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা নিয়ে উপজেলার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও জানান লজ্জা ও ঘৃণার কথা। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর রাতে পাংশাতে সরকারি জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদের বিরুদ্ধে। জানা যায়, পাংশা মাছ বাজার সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ তাদের নিজস্ব জায়গায় টিনশেডের তৈরী ৩৫টি দোকান ঘর নির্মাণ করেন। কিন্তু টিনশেডের উপরের ছাউনি এখনো দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ঐভাবেই পড়ে আছে। কিন্তু হঠাৎ করে ৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ জায়গাটি দখলে নেওয়ার জন্য তার নিজস্ব দোকানের সবজি বিক্রেতাদেরকে তাড়াহুড়া করে উপজেলা পরিষদের নির্মিত টিনশেড ঘরে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, পাংশা পৌরসভার মেয়র, সহকারী কমিশনার (ভূমি), থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওই রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে অবৈধ দখল থেকে জায়গাটি মুক্ত করে। উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মো: জালাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান সরকারি জায়গাটি দখলে নেওয়ার জন্য গভীর রাতে ভাড়াটিয়া বসিয়ে দিচ্ছিলেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং লজ্জাজনক। পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র জানান, শুক্রবার রাতে ফোনে খবর পাই যে সরকারি জমি দখলে নিচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। খবর পেয়েই তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পাংশা থানার ওসি, ভাইসচেয়ারম্যান, সহকারি কমিশনারের উপস্থিতিতে অভিযোগের সত্যতা মিললে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে গত ২০১৮ সালে পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের জমি অবৈধভাবে দখল, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে এলডিপি প্রকল্পে দুর্নীতিসহ মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সেসময় তদন্ত করেন বিষয়টি। বিভাগীয় কমিশনার সরেজমিনে পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ কর্তৃক পাংশা বাজারে উপজেলা পরিষদের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত শেড ও দোকান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেন। সেসময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর ভাইস চেয়ারম্যানের দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, “পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা/২০১৪ অনুসরণ না করে বিধি বহির্ভুতভাবে উপজেলা পরিষদের তহবিল ব্যবহার করে সরকারী জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণসহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে যাচ্ছেন। সাধারণত উপজেলা পরিষদের জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয় এবং জেলা প্রশাসকের অনুমোদনসহ উপজেলা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ এ সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে পাংশা বাজারে পরিষদের জমিতে শেড, দোকান ঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে বরাদ্দের বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি উপজেলা পরিষদের গোচরীভূত হলে মাসিক সভায় দোকান বরাদ্দ বিষয়ে তদন্তের জন্য ৫সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং অবৈধ স্থাপনার সকল কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তিনি উপজেলা পরিষদের জায়গায় নিয়ম বহির্ভুতভাবে ১৩টি দোকান নিজের আপন ভাই, চাচাতো ভাই, আত্মীয়-স্বজন ও উপজেলা পরিষদের কর্মচারীদের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। যা উপজেলা পরিষদের সম্পত্তি অস্থায়ী ভিত্তিতে হস্তান্তর বিধিমালা ২০০৬/২৪ আইন এর পরিপন্থী”। চলতি বছর ১৯ এপ্রিল ফরিদ হাসান ওদুদ মন্ডলের ছোট ভাই পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডলের গুদাম থেকে ইউএনও’র উপস্থিতিতে সরকারি চাল ও পাটের বীজ জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই গুদামে অবস্থান করা আব্দুর রাজ্জাককে আটক করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ বাদি হয়ে পাংশা থানায় চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান মন্ডল ও আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর সিদ্দিকুর রহমান মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এছাড়াও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করা থেকে শুরু করে দলীয় বিভক্তি সৃষ্টির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে পাংশার এই উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে “দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ”।
Leave a Reply