রাজু আহমেদ
রাজধানীর মিরপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বছরে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্র।বাসা-বাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, নানা ধরণের কলকারখানা, বেকারি, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট ও দোকানপাটে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অরক্ষিতভাবে দেয়া এসব গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে যে কোনো মুহুর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে প্রকাশ্যে এগুলো দেখেও অদৃশ্য কারণে কর্তৃপক্ষের নিরবতা নিয়েও জনমতে নানা প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে।
জানা যায়, এ সংঘবদ্ধ চক্রের একজন সক্রিয় হোতা মোহাম্মদ আলি (আলি) নামে মিরপুর ১০ নম্বরের এভিনিউ -৫ এর ১৬ নম্বর রোডের একজন বাসিন্দা। তিতাসের একজন ঠিকাদার তিনি। তবে নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্যার পিএস হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে নিজের বহুতল ভবনসহ আশপাশের বেশকিছু বাড়িতে অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এমনকি তার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরকারি খাল দখল করে অন্যকে বাড়ি তৈরি করতে সহযোগীতা করেও হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ। যেখানে সামান্য বৃষ্টির পানিতে বন্যার সৃষ্টি হয়ে যায়, সেখানে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ভরসা সরকারি খাল দখল করা নিঃসন্দেহে অপরাধ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে, নিজে দুই কাঠা জমির মালিক হলেও তিনি অতিরিক্ত আরো চার কাঠা জমি দখল করে মোট ছয় কাঠা জমির উপরে রাজউক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন। সঠিকভাবে নিয়মমাফিক নির্মাণ কাজও সম্পন্ন করেননি। ফলে যে কোন সময় ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবন ধ্বসে পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটতে পারে বহু প্রাণহানি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সুচতুর মোহাম্মদ আলি (আলি) তিতাসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে স্থানীয় দিদার কাজীর বাড়ি, সাদেক সাহেবের বাড়ি ও তাইজুল ইসলামের বাড়িসহ আরো বেশ কিছু বাড়ি ও দোকানপাটে অবৈধভাবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বিল হিসেবে প্রতিদিন ও মাসিক যে অর্থ আদায় করছেন তার পুরোটাই নিজের পকেটে ঢোকাচ্ছেন। এসব বাড়িতে তিতাস থেকে যেকয়টি চুলা জ্বালানোর অনুমোদন নেয়া হয়েছে পক্ষান্তরে চোরাই লাইনে তার দশ গুণ চুলা জ্বালানো হচ্ছে। আর প্রতিটি চুলা বাবদ মাসে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা অবৈধ বিল আদায় করছেন। তাছাড়া সন্ধ্যা হলেই বিদ্যুত লাইনের মূল সংযোগ হতে অভিনব কায়দায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ লাগানো হয়। লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিতে ভোরের আলো আসার আগেই নিজস্ব পোষ্য লোকজন দিয়ে সেই অবৈধ সংযোগ অপসারণ করে ফেলেন সুচতুর মোহাম্মদ আলি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলির বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার সাথে দেখা করতে চাইলেও তিনি করেননি। অবশেষে মুঠোফোনে তিনি এই প্রতিবেদকের প্রশ্নে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আমি যদি আমার মালিকানাধীন দুই কাঠা জমির স্থানে ছয় কাঠা বা দশ কাঠা দখল করে সেই জমির উপরে বাড়ি করে থাকি তাতে সাংবাদিকদের কি? আমার বাড়িতে অবৈধ গ্যাস বা বিদ্যুৎ সংযোগ এবং পার্শ্ববর্তী উল্লেখিত বাড়ি দোকানগুলোতে আমি অবৈধভাবে গ্যাস বিদ্যুত সংযোগ দিলেও সেটি দেখার কোন এখতিয়ার সাংবাদিকদের নেই। সেটি দেখবে সংশ্লিষ্ট তিতাস ও ডেসকো কর্তৃপক্ষ।
‘আপনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের পিএস কিনা’ এমন প্রশ্নে তিনি আরো ক্ষেপে গিয়ে বলেন, আমি আপনার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই। আপনারা যা পারেন করেন। আমার বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করে আমার কিছুই করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে তিতাসের মহাব্যবস্থাপক কোনো মন্তব্য না করলেও ডিএনসিসির স্থানীয় তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, এর সঙ্গে তিতাস ও ডেসকো’র লোকজনের যোগসাজশ অবশ্যই রয়েছে। তাছাড়া প্রকাশ্যে এ ধরণের কর্মকাণ্ড করা এতটা সহজ নয়। তিতাসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের উচিত দ্রুত সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তিনি বলেন, সরকারি খাল দখল করে বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে জানতে পেরে আমি সেটি অপসারণ করে দিয়েছি। তারপরেও যদি ফের সরকারি খাল দখল করে কেউ কোন স্থাপণা নির্মাণ করেন সেটির বিরুদ্ধে অবশ্যই আমি কাউন্সিলর হিসেবে আপনাদেরকে সাথে নিয়েই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়া মোহাম্মদ আলি নামে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের কোনো পিএস নেই।
কাউন্সিলর আরো বলেন, আমার এলাকায় সরকারি খাল দখল করে স্থাপণা নির্মাণ করা চলবে না। তাছাড়া এই ধরনের অবৈধ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ সাধারণত বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিভাগের ঠিকাদার ও মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মীরা দিয়ে থাকে। এ বিষয়গুলো ডেসকো ও তিতাসের উর্ধতন কর্মকারতাদের অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা জরুরি।
Leave a Reply