গত ইংরেজি ১৬/৯/২০২০ তারিখ তখন দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট, মোহাম্মদপুর থানাধীন মিরপুর রোডস্থ আসাদগেট শাখা পূবালী ব্যাংকে টাকা তুলতে যান সাবেক অতিঃ সচিব জনাব কামরুজ্জামান। তিনি ৫ লক্ষ্য টাকা তুলে ব্যাংক থেকে নেমে অনুমান ১০০ গজ সামনে ১.৩৫ মিনিটের সময়ে হুমায়ুন রোডের মাথায় পৌছালেই ঘটল এক লোমহর্ষক ঘটনা। পূর্ব থেকেই ওতপেতে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ডিবির জ্যাকেট পরে হাতে ওয়ারলেস সেট নিয়ে প্রাইভেট কারে বসেছিল। লোকটাকে দ্রুত চোখ বেধে গাড়িতে তুলে সিটের নিচে উপুড় করে ফেলে রাখে।
ডাকাতরা সিটে বসে তাকে পায়ের নিচে ফেলে ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলিতে ঘুরতে থাকে, এক পর্যায়ে ডাকাতরা ধামরাই ইসলাম পুর নামক স্থানে তাকে মারধর করে টাকা নিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। ভিকটিম কামরুজ্জামান সাহেব ঘটানার বর্ণনা দিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটা মামলা দায়ের করেন। উর্ধতন কর্মকর্তা গন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে মোহাম্মাদপুর থানার এস আই সাহিদুল ইসলাম কে নিযুক্ত করেন। মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে এস আই সাহিদুল ইসলাম বলেন, মামলাটি গ্রহণ করার পর হিমসিম খাচ্ছিলাম কারন মামলার বাদী কোন আসামির নাম জানেনা,চোখ বাধা থাকার কারনে আসামিদের দেখলেও চিনতে পারবেনা। তেজগাঁও ডিভিশনের এডিসি মৃত্যুন্জয় সজল স্যার, সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সৈকত স্যার সহ ৬ জন সাব-ইন্সপেক্টর দিয়ে একটি টিম গঠন করে দেন।শুরু হয় অভিযান, মোহাম্মাদপুর থানা থেকে ধামরাই ইসলামপুর পর্যন্ত ২৪০ টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়।ব্যাংকের ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা ১ জন ডাকাতকে সন্দিগ্ধ হিসেবে সনাক্ত করি।তাতেও ভরসা পাচ্ছিলাম না।
এডিসি সজল স্যার,এসি সৈকত স্যার,ঘটনা স্থলের সকল মোবাইল কোম্পানির মেবাইলের Lac এবং Cell Id সংগ্রহ করতে বলেন। আমরাও সংগ্রহ করলাম ৩০ মিনিটের মধ্যে ৪৫ হাজার কল লিস্ট।৪৫ হাজার কল লিস্টের মধ্যে প্রকৃত আসামিদের বেছে বাহির করা খুবই কঠিন কাজ ছিল।এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন এডিসি সজল স্যার নিজেই, স্যার এই কল লিস্ট যাচাই বাছাই করে ৭/৮ জনকে টার্গেট করে সামনের দিকে আগাতে বলেন। প্রথমে আমরা পিয়াসকে গ্রেফতার করি,সে বাংকের মধ্যে ঢুকে তথ্য দেওয়ার কাজ করতো যাহা ভিডিও ফুটেজের সাথে মিলে যায়।
ঘটনার সবকিছু স্বীকার করে ঐ দিনই ২ য় আসামি প্রতিক কে গ্রেফতার করি। প্রথম দিন পর ৩য় আসামি উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এদের সাথে জড়িত অন্যান্য আসামি দের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে। আসামিরা খুবই ভয়ংকর একটি চক্র তাদের সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা,খুন,ডাকাতি,চাঁদাবাজি,সহ অস্ত্র মামলা রহিয়াছে।তারা ঢাকার মিরপুর,জিকেতলা,ধানমন্ডি, মতিঝিল,যাত্রা বাড়ী সহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংকের আসে পাশে ওতপেতে থাকে সুযোগ বুঝে অপহরণ করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায় বলে স্বীকার করে। এই চক্রটিকে ধরতে পেরে আমি ও আমার টিম সত্যিই গর্বিত।
এরকম ভাবে সকল অফিসার ফোর্স একে অপরের সাথে টিম ওয়ার্ক কাজ করলে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়। ডাকাতি কাজে ব্যবহারিত প্রাইভেট কার, ও লুণ্ঠিত টাকার কিছু অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামিরা বিঞ্জ,আদালতে কাঃবিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। কথাই বলবো আপনারা ব্যাংকে লেনদেন করলে পুলিশের সহায়তা নিবেন।আমি মনে করি আমি ও আমার টিম এই ঘটনায় সম্পূর্ন সফল।
Leave a Reply