বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট থেকে ভাস্কর্যবিরোধী মিছিল বের করে মুসুল্লীরা। এতে পুলিশ বাধা দিলে সেখানে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে মিছিল নিয়ে বের হলে কাকরাইলে এসে পুলিশি বাধায় তা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। মিছিল থেকে সাত-আট জনকে আটক করে রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
মুসুল্লীরা অনুসারীদের ভাস্কর্যবিরোধী এই মিছিলে বিভিন্ন শ্লোগানের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগবিরোধী শ্লোগানও দেয়া হয়। তবে তারা কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। সেই সঙ্গে মিছিলে ছিল না কোনো ব্যানার কিংবা ফেস্টুন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ সমাবেশ বা মিছিল বের করতে আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়ে থাকে। কিন্তু আজকে যারা মিছিল বের করেছে তারা আগে থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। অনুমতি ছাড়াই তারা বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট থেকে মিছিল বের করে। এসময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরকে উপেক্ষা করে তারা মিছিল এগিয়ে যেতে থাকে। এভাবে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মিছিল আসতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, আমরা (পুলিশ) তাদেরকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে, অনুমতি ছাড়া তারা এটা করতে পারে না। কিন্তু তারা কোনো কথা না শুনে কাকরাইলের কর্ণফুলী মার্কেটের সামনে পর্যন্ত চলে আসে। এতে যানবাহন চলাচল থেমে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এমতাবস্থায় তাদের মিছিল থামাতে পুলিশ বাধা দিলে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। মিছিলটির নেতৃত্বে ছিল না পরিচিত কোনো নেতা বা কোনো দলের পরিচয়। এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার তাদের কাছে দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলেও তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা করেনি।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বাদ জুম’আ বায়তুল মোকাররমে মূর্তিবিরোধী মিছিলে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মূর্তি বিরোধী কোন কর্মসূচিতে পুলিশী হামলা মেনে নেয়া যায় না। তিনি অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত মাদরাসা ছাত্র এবং ঈমানদার মুসল্লিদের মুক্তির দাবি জানান।
মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলা স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, তাহলে কি সরকার নাস্তিক মুরতাদ ও শয়তানী শক্তির পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে? ওলামায়ে কেরামের মুর্তি ও ভাস্কর্যের বিষয়ে এতো খোলামেলা বিশ্লেণের পরেও কোন মুসলমান মূর্তি বা ভাস্কর্যের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না।
অনেক বুদ্ধিজীবী মুর্তি বিরোধীদের বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে দাড় করানোর অপচেষ্টা করছেন। আপনাদের জানা উচিত, আমরা আপনাদের মতো কথিত ভন্ড দেশপ্রেমিক নই। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ। ইতোপূর্বে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হাইকোর্টের সামনে থেকে থেমিসের মুর্তি অপসারণে যেমন আন্দোলন করেছে, এখন ধোলাইপাড়ে নতুন মূর্তি স্থাপনসহ সারাদেশে নির্মিত মানবমূর্তির বিরোধিতা করছে। এখানে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি টার্গেট নয়, বরং ইসলামে নিষিদ্ধ সকল প্রাণী তথা মানবমুর্তির অপসারণ আমাদের ঈমানী দাবি। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ মূর্তির দেশ হিসেবে বিশ্বে দুর্নাম কামাবে, সেটা মুসলমানরা মেনে নিতে পারে না। এ ব্যাপারে দল-মত-মাযহাব নির্বিশেষে সকল মুসলমান একমত।
সূতরাং সরকারের উচিত, ওআইসিভুক্ত এই দেশকে ভারতের স্টাইলে না চালিয়ে এদেশের মাটি ও মানুষের ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। নতুবা আপনাদের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
Leave a Reply