বিকাশ চন্দ্র প্রাং, নওগাঁ প্রতিনিধি:
সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করেন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু যখন কোন উপ-স্বাস্হ্য কেন্দ্রটি নিজেই রোগীতে পরিণত হয়, খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলে তার কার্যক্রম তখন সেই এলাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয় হাজার হাজার মানুষ।
এমনই অবস্থা নওগাঁর রাণীনগরের প্রত্যন্ত গ্রাম নারায়নপাড়ায়। উপজেলার একডালা ইউনিয়নের এই গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আশির দশকে স্থাপন করা হয় নারায়নপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। বর্তমানে জনগুরুত্বপূর্ন এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই পঙ্গু রোগীতে পরিণত হয়েছে তবুও দৃষ্টি নেই উর্দ্ধতন কর্তা ব্যক্তিদের। সরকারের সুদৃষ্টির অভাবে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এই অঞ্চল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব প্রায় ২৫কিলোমিটার। তাই এই পূর্বাঞ্চলের মানুষদের মাঝে জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যেই স্থাপন করা হয় এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি। কিন্তু আশির দশকে স্থাপনের পর থেকে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে আর কোন সংস্কার কিংবা মেরামতের ছোঁয়া স্পর্শ না করাই বর্তমানে এটি নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। অনেক বছর আগেই দাপ্তরিক ভাবে এই কেন্দ্রের সকল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিনই এই অঞ্চলের মানুষদের মাঝে জরুরী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। বর্তমানে স্থানীয়রা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। চারিদিকের নিরাপত্তা বেষ্টনী নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এটি বর্তমানে রাতের আঁধারে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রের চারপাশে বৃষ্টির পানি জমে পরিণত হয়েছে পুকুরে। স্থানীয়রা গবাদিপশুর খড় পালা দিয়ে রেখেছে। ভেঙ্গে পড়েছে ভবনগুলোর দেয়াল ও দরজা-জানালা। প্রধান ভবনের পরিত্যক্ত অংশ কোন ভাবে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এখানে কোন প্রকারের চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা যায় না। শুধুমাত্র কিছু ঔষুধ বিতরন শেষে আবার সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। অত্যন্ত জরুরী চিকিৎসা সেবা নিতে এই অঞ্চলের মানুষদের যেতে হয় উপজেলা সদরে যা খুবই কষ্টসাধ্য একটি বিষয়।
স্থানীয় বাসিন্দা বাবু, আব্দুল জলিলসহ অনেকেই বলেন আমরা অনেক জরুরী চিকিৎসা সেবা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমানে এর যে বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ন অবস্থা তাতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতেই ভয় লাগে যে কখন যেন আমাদের উপর ভেঙ্গে পড়ে। চিকিৎসা নিতে আসা অনেক মানুষের মাথায় ছাদের পলেস্তার ভেঙ্গে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাই সরকারের কাছে দাবী এই অঞ্চলের খেটে-খাওয়া মানুষদের ঘরে ঘরে ২৪ঘন্টা চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিকে দ্রুত আধুনিকায়ন করা হোক। যাতে আমরা সব সময় সকল প্রকারের চিকিৎসা সেবা এই কেন্দ্র থেকে পেতে পারি।
কেন্দ্রে দায়িত্বরত ফর্মাসিষ্ট মামুনুর রশিদ বলেন প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। কখন যে উপরের পলেস্তার কিংবা ছাদের ঢালাই মাথার উপর ভেঙ্গে পড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তবুও এই অঞ্চলের মানুষদের মাঝে জরুরী চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছি। প্রতিটি মানুষের দ্বোর গড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়ার যে ভিশন সরকার গ্রহণ করেছে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হলে কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি এই সব রূগ্ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে জরুরী ভাবে আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন বেশ কয়েক বছর আগে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সকল ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। কিন্তু কোন উপায় না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারের ভিশনকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টরা শুধুমাত্র জরুরী চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। আমি অনেকবার এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেহাল কথা লিখিত ভাবে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন ফল পাওয়া যায়নি। এই কেন্দ্রটিকে আধুনিকায়ন করে দূরবর্তি প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের এই সব মানুষদের ঘরে ঘরে মান সম্মত সকল প্রকারের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তাই এই জনগুরুত্বপূর্ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দিকে সরকারের দ্রুত সুদৃষ্টি কামনা করছি।
Leave a Reply