আতিকুর রহমান কাযিন
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে (০২ জুলাই) শুক্রবার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী এলাকায় সাদিয়া আক্তার টুনি (০৯) নামের এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর থেকে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে মরিয়া হয়ে পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে ফজর আলী নামে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
এদিকে ৩ জুলাই কিশোরগঞ্জের পিবিআই ক্রাইমসীন ইউনিট উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। ঘটনার পর হতে পিবিআই কর্তৃক ছায়া তদন্ত অব্যাহত থাকে।
গত ২ জুলাই সাদিয়া আক্তার টুনির বাবা মো. চুন্নু মিয়া বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কটিয়াদী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে বাদীর উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম এর উপর মামলার তদন্তভার অর্পন হয়।
অভিযোগ সূত্র জানা যায়, লোহাজুরী ইউনিয়নের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীতে মাছ ধরার জন্য যায় টুনির বাবা মোঃ চুন্নু মিয়া। প্রতিদিনের মতো সকাল ৭টায় সাদিয়া আক্তার টুনি মাছ আনার জন্য নদীর ধারে যায়। ঐ দিন পর্যাপ্ত পরিমানে মাছ না পাওয়ায় টুনির বাবা তাঁকে বাড়ীতে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। ঘটনার আড়াই ঘন্টা পর চুন্নু মিয়া জাল ও মাছ নিয়ে বাড়ী ফিরেন। পরে টুনিকে বাড়িতে না পেয়ে নদীর ধারে খোঁজাখুঁজি করেন। এক পর্যায়ে এক পাশের একটি পাট ক্ষেতে সাদিয়া আক্তার টুনির হাত পা বাধা ও গলায় ওড়না দিয়ে পেচানো অবস্থায় মরদেহ দেখতে পায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে গত ১১ জুলাই সাদিয়া আক্তার টুনি (৯) ধর্ষণ শেষ হত্যা মামলাটি কিশোরগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইতে) মামলাটি স্থানান্তর করেন। মামলা নং-৪। মামলাটি পিবিআই সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই গত ১১ জুলাই মামলাটি অধিযাচন করতে পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন।
তদন্তকারী অফিসার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দক্ষিণ নজরুল ইসলাম (৩৫) কে গ্রেফতার করেন। আজ (সোমবার) ১৩ জুলাই ভোরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার বাড়ইপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত নজরুল লোহাজুরী গ্রামের ছমর উদ্দিনে পুত্র। পরে আসামী নিহত সাদিয়া আক্তারকে নিজেই অপহরন শেষে একাই হত্যা করেছে মর্মে কিশোরগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়ার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের নিকট ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করে।
জবানবন্দিতে নজরুল বলেন, ঘটনার দিন তার কাকরল ক্ষেতে বৃষ্টির জমা পানি নামানোর জন্য জমিতে যায়। জমি থেকে পানি নামিয়ে বাড়ী ফিরছিলেন নজরুল। এসময় পাটক্ষেতের পাশে সাদিয়া আক্তার টুনিকে দেখতে পায়। পরে সাদিয়া আক্তার টুনিকে ধর্ষণের জন্য জড়িয়ে ধরে। তখন মা-বাবার কাছে ধর্ষণের কথা জানিয়ে দিবে বলে জানায় টুনি। এরপর ঘাতক নজরুল বাম হাত দিয়ে প্রথমে সাদিয়া আক্তার টুনির মুখ চেপে ধরে। পরবর্তীতে তাকে অপহরন করে নিকটবর্তী পাটক্ষেতের ভিতরে নিয়ে যায়। পরে পাটক্ষেতের ভিতরে ভিকটিমকে শুয়াইয়া ডান হাত দিয়ে ভিকটিমের পায়জামা খুলে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেন।
জবানবন্দিতে নজরুল আরও বলেন, ঘটনার সময় শিশু টুনি বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলে আসামী নজরুল শিশুটিকে মুখে চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে পাট ক্ষেত দিয়ে বাড়ী ফিরেন ঘাতক নজরুল।
ঘটনার পর উক্ত আসামী স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। পরবতীতে গা ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পলাতক হয়ে সর্বশেষ ঢাকার আশুলিয়া অবস্থান করে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
Leave a Reply