টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে ডুবে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা। শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে এখন হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। দোকানপাট ও বাসা-বাড়িতেও ঢুকে পড়েছে পানি। শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত প্রতিদিনই থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে। আর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে জোয়ারের পানি। আর এ পানিতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। অচল হয়ে পড়েছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।বৃষ্টির পানিতে নগরের মুরাদপুর, চকবাজার, শোলকবহর, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন বাজার, ফিরিঙ্গিবাজার, কাপাসগোলা, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, ২নম্বর গেট, জামালখান, দেওয়ান বাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিনপুলের মাথা, বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। নগরের শোলকবহর এলাকার বাসিন্দা এহসানুল করিম মানবজমিনকে বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করছি। প্রতি বছরই বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা হয়। তবে এবারের মতো পরিস্থিতি আর কখনো দেখিনি।জানা যায়, গত দুইদিন সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকলকারখানা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেককে বাসা থেকে বের হতে হয়নি।
তবে রোববার সকল অফিস, শিল্পকলকারখানা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। এতে সকালের জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থলমুখী লোকজন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও। পানির অজুহাতে বাড়তি ভাড়া দাবি করে রিকশা-সিএনজি চালকরা। এদিকে সড়কে কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক অটোরিকশা বিকল হয়ে যাচ্ছে। লোকজনকে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ায় প্যাডেলচালিত রিকশায় চলাচল করতে হচ্ছে। রোববার সকালে সরজমিন দেখা যায়, নগরের চকবাজার ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে কাঁচাবাজারের দোকানপাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ভোগ্যপণ্যের দোকান-আড়তেও পানি ঢুকেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
মুরাদপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ‘হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কয়েকটির কাজও নাকি শেষ হয়েছে। তাহলে আজকে নাগরিকদের এভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হবে কেন? হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট পরের কথা। নালাগুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। তাহলে সিটি করপোরেশন করছে কি? আবর্জনা অপসারণ না করায় সামান্য বৃষ্টিতেও এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন ছিল মশার ভোগান্তি। এখন আবার যুক্ত হয়েছে পানি। আসলে আমরা ভালো নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীতে ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী বছরের জুনে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রকল্পের সময় আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এরমধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৬ বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে এরপরও ভোগান্তি কমেনি নগরবাসীর।
এদিকে প্রবল বর্ষণের কারণে নগরীতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নেয়ার জন্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করেছেন। শনিবার রাতে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান আকবরশাহ এলাকার বিজয় নগর ও ঝিল পাহাড়গুলোতে অভিযান চালিয়ে ২৫০টি পরিবারকে দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাহাড়ে বসবাসরতদের মাইকিং করে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিদিন জেলা প্রশাসনের টিম কাজ করছে। আমি ঝুঁকিপূর্ণ ২৫০ পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছি।
Leave a Reply