1. asaduzzamann046@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@shomoyeralo24.com : Shomoyer Alo : Shomoyer Alo
শিরোনাম :
চাহিদামতো ঘুষের টাকা নিয়েও কাজ করে না ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ছাগলনাইয়া মৌরী নদীরপারে অপহৃত জসিম উদ্দিন চৌধুরীর লাশ উদ্ধার ইটনায় সেনাবাহিনীর হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার, সংঘর্ষে আহত ১ শেখ হাসিনা কি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আইন কী বলে জুডিশিয়াল ক্যু’র মাধ্যমে ড. ইউনূস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা যেত কী: আইন ও বাস্তবতার বয়ান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মাস্টাররুলে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়িত্বকরণে মানববন্ধন মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলায় বিএনপি নেতার বাড়ীতে যৌথবাহিনী হামলা ও মামলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, আইন কী বলে মুন্সিগঞ্জ টুংগিবাড়ী উপজেলায় বিএনপি নেতা দোলন ও কুমারী মুসরাত গুমের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফেনী সদর উপজেলা মধুপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারে হামলা ও ডাকাতি

জুডিশিয়াল ক্যু’র মাধ্যমে ড. ইউনূস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা যেত কী: আইন ও বাস্তবতার বয়ান

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫২৫ বার

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয় গত ৮ আগস্ট, ২০২৪। ১০ আগস্ট,২০২৪ বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে আদালত পরিচালনা করা যায় ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুল কোর্ট মিটিং ডেকেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। সমস্যাটি হলো, দেশের এই দুঃসময়ে প্রধান বিচারপতির ডাকা ফুল কোর্ট মিটিং স্থগিতের বিষয়টি যেভাবে মিডিয়া এসেছে, তার আগে মিটিং আহ্বানের বিষয়টি সেভাবে মিডিয়ায় আসেনি। অর্থাৎ ফুল কোট মিটিং আহবানের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি ও কিছুটা লুকোচুরির আশ্রয় দেখা যায়। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধে। ফুল কোর্ট মিটিং এর বিষয়টি প্রথমে সকলের দৃষ্টিগোচর হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আসিফ মাহমুদ জুয়েল ভূঁইয়ার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে।

‘তিনি লেখেন, সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে প্রধান বিচারপতি ফুল কোর্ট মিটিং ডেকেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ দাবি করেছেন প্রধান বিচারপতির। শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল ৯টা ৭ মিনিটে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন। আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদের মদদপুষ্ট ও নানান অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে ফুল কোর্ট মিটিং ডেকেছেন।পরাজিত শক্তির যে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা এরই মধ্যে এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন। আমরা আগেই প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম। ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাদের উস্কানি দিলে এর ভয়াবহ পরিণাম ভোগ করতে হবে। অনতিবিলম্বে বিনা শর্তে প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করুন এবং ফুল কোর্ট মিটিং বন্ধ করুন।’ (দেশ টিভি নিউজ অনলাইন, ১০ আগস্ট ২০২৪)।

সরকারের একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে, সরকারের অন্য একটি বিভাগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ফেসবুকে ঘোষণা দিতে পারেন কি না সেটি বিতর্কের বিষয়। এ বিষয়ে আরেকদিন লিখব, আজকের আলোচনার বিষয় ভিন্ন।এরপর থেকেই দেশে সর্বত্র জুডিশিয়াল ক্যু পরিভাষাটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। আমরা আলোচনাটি সহজভাবে অনুধাবনের জন্য প্রথমেই ক্যু শব্দটির অর্থ জানার চেষ্টা করব। ক্যু (Coup) শব্দটি ফরাসি (Coup D’e’ta) শব্দ থেকে নেওয়া। যার অর্থ আকস্মিক অভ্যুত্থান বা শক্তিবলে অবৈধভাবে শাসনতন্ত্র পরিবর্তন বা স্থগিতকরণ। ক্ষেত্র বিশেষ অভ্যুত্থান বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন: সুশীল সমাজের অভ্যুত্থান, সাংবিধানিক অভ্যুত্থান, পাল্টা-অভ্যুত্থান, গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থান, ভিন্নমতাবলম্বী অভ্যুত্থান, নির্বাচনী অভ্যুত্থান, বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান, বাজার অভ্যুত্থান, মেডিকেল অভ্যুত্থান, সামরিক অভ্যুত্থান, সংসদীয় অভ্যুত্থান, রাষ্ট্রপতির অভ্যুত্থান ও রাজকীয় অভ্যুত্থান ইত্যাদি। পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিবেচনায় যে কোনো দেশে যে কোনো ধরনের অভ্যুত্থান হতে পারে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জুডিশিয়াল ক্যু বা বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, এরপর থেকেই আমরা একের পর এক পাল্টা-অভ্যুত্থানের গুজব বা হুমকি শুনে আসছি। যদিও এ পর্যন্ত কোনো পাল্টা-অভ্যুত্থান দৃশ্যমান হয়নি তারপরেও অনেকে মনে করেন হঠাৎ করে প্রধান বিচারপতির ফুল কোর্ট মিটিং এর আহ্বান পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রেরই অংশ। কারণ সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সহ সর্বোচ্চ আদালতের অধিকাংশ বিচারপতিই শেখ হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত এবং আস্থাভাজন। যেহেতু ছাত্র-জনতা তাদের ভাষায় এই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছে, তাই আর বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থান করা সম্ভব হয়নি।

এ পর্যায়ে আমরা দেখব, প্রধান বিচারপতি সরকারের অনুমতি ছাড়া ফুল কোর্ট মিটিং আহ্বান করতে পারেন কি না অথবা ফুল কোর্ট মিটিং বা এর আলোচ্য বিষয়ে সম্পর্কে আইন কি বলে। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট রুলস এন্ড অর্ডার এর বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, নভেম্বর ২১, ২০১২ এর অধ্যায় ১ক এর ১৬ থেকে ১৯খ বিধিতে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। নিম্নে বিধিগুলো উল্লেখ করা হলো।বিধি ১৬: ফুল কোর্ট সভার বিষয়বস্তু:-

নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ফুল কোর্ট সভার সামনে উপস্থাপন করা যাবে:(ক) আইনের প্রস্তাবিত পরিবর্তন যেখানে প্রস্তাবটি সরকার বা কোনো একটি কমিটি বা যখন আদালতের কোনো বিচারকগণ এই পদক্ষেপের জন্য দাবি করে,
(খ) সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন (হাইকোর্ট বিভাগ), প্রকাশের আগে,
(গ) বিধিসমূহ যা, প্রকাশিত হলে, আইনের কার্যকারিতা থাকবে,
(ঘ) স্থগিতাদেশ এবং পদোন্নতির জন্য সমস্ত সুপারিশ, একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার উপর দণ্ড এবং জরিমানা আরোপ,
(ঙ) এই বিধিগুলির যে কোনো বিধান দ্বারা প্রয়োজনীয় যে কোনো বিষয় ফুল কোর্টের সামনে উপস্থাপন করতে হবে;
(চ) প্রধান বিচারপতি (তাঁর মর্জি মতো)যে কোনো বিষয় উপস্থাপন করতে পারেন।
বিধি ১৭: বাতিল করা হয়েছে।

বিধি ১৮: ফুল কোর্ট সভার নোটিশ:-
প্রধান বিচারপতির আদেশে রেজিস্ট্রার, যেদিন বৈঠক হবে তার কমপক্ষে দুই দিন আগে, কার্যসূচিসহ ফুল কোর্টের সভার সমস্ত বিচারকদের নিকট নোটিশ প্রচার করবেন এবং বিশেষ জরুরি ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গতভাবে মিটিং এর আগেই তাৎক্ষণিক নোটিশ প্রচার করে মিটিং করতে পারবেন।বিধি ১৮ক: ফুল কোর্ট মিটিং এবং ভিন্নমত:-একজন স্বতন্ত্র বিচারক ফুল কোর্ট মিটিং দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে ভিন্নমত পোষণ করার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং এই ধরনের ভিন্নমত বিধি ১৯এ উল্লিখিত কার্যবিবরণীতে রেকর্ড করা হবে।

বিধি ১৯: ফুল কোর্ট সভার কার্যবিবরণী:-
ফুল কোর্টের কার্যবিবরণী রেজিস্ট্রার কর্তৃক মনোনীত একজন উপযুক্ত কর্মকর্তার দ্বারা সেই উদ্দেশ্যে রাখা বইগুলিতে লিপিবদ্ধ করা হবে, এবং তা সর্বদা পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বা বিচারকদের যে কেউ তলব করতে পারবে। এই ধরনের কার্যবিবরণী রেজিস্ট্রার কর্তৃক প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁর যাচাই ও স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করবে।বিধি ১৯ক: ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্ত পাঠ করা হবে এবং ফুল কোর্ট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের সারাংশ উপস্থিত বিচারকদের নিকট পড়ে শোনানো হবে।

বিধি ১৯খ: প্রধান বিচারপতি জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন:- এই অধ্যায়ের বিধান দ্বারা একটি স্থায়ী কমিটি বা একটি বিশেষ কমিটি বা বিচারকদের প্রদত্ত ক্ষমতা সত্ত্বেও, প্রধান বিচারপতি, জরুরি ক্ষেত্রে, এখতিয়ারের মধ্যে থেকে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ উপরিউক্ত বিধান থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট হলো যে, প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে যে কোনো সময়ে ফুল কোর্ট মিটিং আহ্বান করতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকারের সাথে আলোচনার বা অনুমতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বিধি ১৮ অনুসারে, স্বাভাবিক অবস্থায় মিটিং এর দুই দিন আগে অন্যান্য বিচারকদের নোটিশ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন তবে জরুরি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক নোটিশ দিয়েও মিটিং আহ্বান করতে পারেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জুয়েল ভূঁইয়া যে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফুল কোর্ট মিটিং এর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক সরকারের অনুমতি না নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি নেই। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অথবা আইন না জানার কারণেই হয়তো তিনি বিষয়টি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন।

ফুল কোর্ট মিটিং এ যেসব বিষয় আলোচনা হতে পারে তাও আমরা উল্লিখিত বিধির দ্বারা জানতে পারলাম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এক্ষেত্রে জুডিশিয়াল ক্যুর প্রশ্ন আসবে কেন? এ বিষয়ে আমরা মনে করতে পারি, বাংলাদেশে জুডিশিয়াল ক্যুর বিষয়ে প্রথম আলোচনা হয় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে (এস কে সিনহা) জোর করে বিদেশে পাঠানোর পূর্বে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে। ৩ জুলাই, ২০১৭ সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সরকারের আপিল খারিজ করে সর্বসম্মতিক্রমে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের পূর্বের রায় বহাল রাখেন। এরপর ১ অগাস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট, যা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। তৎকালীন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, প্রধান বিচারপতিকে দিয়ে ড. কামাল হোসেন একটি জুডিশিয়াল ক্যু করাতে চাচ্ছেন। সরকারের ভয় ছিল, আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ এর রায়ে হয়তো প্রধান বিচারপতি সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করবেন। যে কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নিয়োগ পাওয়া একজন অমুসলিম প্রধান বিচারপতি তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে অবসরে যেতে পারেননি। উল্লিখিত বিষয়গুলো বিচারপতি এস কে সিনহার লেখা ‘এ ব্রকেন ড্রিম: রুল অফ ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমক্রেসি’ বইতে পাবেন।

এখন প্রশ্ন হল, বিচারপতি এস কে সিনহা না হয়, রিভিউ আবেদন শুনানি করে আদালতের রায়ের মাধ্যমে সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করতেন। কিন্তু গত ১০ আগস্ট তো এরকম কোনো রীট পিটিশনের শুনানি ছিল না, ছিল ফুল কোর্টের মিটিং। এক্ষেত্রে ফুল কোর্ট মিটিং করে সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারতো কি? এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেওয়া সম্ভব নয়, যা হতে পারতো তা নিম্নে আলোচনা করছি।

প্রথম ক্ষেত্রে, আমার মতে গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে জুডিশিয়াল ক্যু হতো না। কারণ ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর এবং ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর একটি ক্রান্তিকালীন অবস্থার উদ্ভব হয়। ‘এর আগে এমনভাবে সাংবিধানিক সংকট রেখে দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের শপথ নেয়ার আগেই এর আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র একাধিক আইনজীবীর মতামত নেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান।
যাতে উঠে আসে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের রুলিং নিলেই কেবল সাংবিধানিক সংকট কাটবে। নতুন সরকার শপথ নিলে কোনো সাংবিধানিক সংকট হবে কি না সুপ্রিম কোর্টের কাছে সেই মতামত চেয়ে পাঠান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ বিষয়ে নজিরবিহীনভাবে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় ভার্চুয়ালি বসে সুপ্রিম কোর্ট। শুনানিতে অংশ নেন নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
প্রায় ঘণ্টাখানেক শুনানি শেষে ১৭ পৃষ্ঠার রুলিং দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বলেন, শপথ নেয়ার ৭ মাসের মধ্যে পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে গেছেন। এ মুহূর্তে দেশে একটি মধ্যবর্তী সরকার দরকার। কাজেই ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার শপথ নিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। আদেশে আপিল বিভাগ আরও বলেন, দুর্যোগ মুহূর্তে এমনটি হতে পারে। ভবিষ্যতে যাতে এই অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে, তাই এ বৈধতা দেওয়া হয়।’ (চ্যানেল ২৪ অনলাইন, ১০ আগস্ট ২০২৪)।
যেহেতু মাত্র দুইদিন পূর্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা দিয়েছে তাই তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে জুডিশিয়াল ক্যু হয়তো করতো না। তারা স্বাভাবিকভাবে পূর্বের ফুল কোর্ট মিটিং এর ন্যায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেই মিটিং শেষ করতো। কারণ তাঁরা জানেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তখনো সবাই রাজপথে আছে। এমতাবস্থায় বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে, তারা পার পাবেন না। তাঁদের আইনাঙ্গনে যতই ক্ষমতা থাকুক এটাই হলো বাস্তবতা।

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, আমার মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট মিটিংয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে জুডিশিয়াল ক্যু করতে পারত। কারণ আমরা যদি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৪ ও ১০৫ অনুচ্ছেদের বিধান দেখি সেখানে ১০৪ অনুচ্ছেদে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার তত্ত্বের (Complete Justice Theory) আলোকে শুধু মামলা-মোকদ্দমা নয়, আপিল বিভাগ যে কোনো বিষয়ে প্রয়োজনীয় যে কোনো আদেশ দিতে পারেন। অন্যদিকে ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত যে কোনো রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের আছে। উপরিউক্ত বিধানের আলোকে, প্রধান বিচারপতি যদি মনে করতেন যে, আমাদের দেওয়া পূর্বের রুলিং পরিবর্তন করে বর্তমান সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করবো, তাহলে তিনি তা পারতেন। এক্ষেত্রে আইন ও সংবিধানে কোনো বাধা নেই।

এই সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় শেখ হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের রয়টার্সে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে। নিম্নে ঢাকা টাইমস এর রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো ‘সজীব ওয়াজেদ জয় এতদিন আপনাদের সাথে ‘আমি নাই, মা নাই’ বলে বলে হঠাৎ গতকাল রয়টার্সকে বলেছেন তাঁর মা পদত্যাগ করেননি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘোষণা ছিল যা বোঝা গেছে আজ। সেনাবাহিনীর নিচের দিকের অফিসাররা যদি জনগণের পক্ষে না থাকত, তাহলে আজকে আরেকটা রক্তের বন্যা বয়ে যেত। আজকেও সেনাবাহিনীর ছোট অফিসাররা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে ছাত্র জনতাকে বাঁচিয়েছে। আজকে একটা ক্যুয়ের প্ল্যান করেছিল জয় এবং আরাফাত। কিন্তু সঠিক সময়ে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা ছাত্রদের কাছে তথ্য ফাঁস করে দেয়। এই তথ্য জানার পরে জুডিশিয়াল ক্যু রুখে দেয় ছাত্ররা। জয় আরাফাত আর তাদের গাইডদের গোপন প্ল্যান ছিল এইরকম। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন রংপুরে আবু সাঈদের বাড়ি পরিদর্শন এবং কবর জিয়ারতের জন্য যাবেন এবং তারপর উনার হেলিকপ্টার যখন আকাশে থাকবে, ঠিক সেই সময়ে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা ফুল কোর্ট বসিয়ে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করবেন। সাথে সাথে এই ক্যুয়ের সাথে জড়িত সেনাবাহিনীর ২৫ কর্মকর্তা, চাকরি থেকে কর্মবিরতিতে থাকা দুর্নীতিবাজ পুলিশের একটি দল রাজধানীতে হট্টগোল শুরু করবে আর শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসবেন এবং সাথে সাথে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা মাঠে চলে আসবেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধান বিচারপতি সরকারের সাথে কোনো আলোচনা না করে হঠাৎ ৫৭ বিচারপতিকে নিয়ে জরুরি মিটিং ডাকেন।’ (১১ আগস্ট, ২০২৪)। আমরা গায়েব জানি না, হতে ওতো পারতো। তাই অস্বীকার করার উপায় নেই।

এক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন থেকে যায়, অনেকে দাবি করতে পারেন এই মিটিং তো ভার্চুয়ালি হওয়ার কথা ছিল। সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে বা কোর্টের বেঞ্চে না বসে রায় দিলে তা বৈধ হতো কি? সহজ উত্তর হতো। কারণ ৮ আগস্ট এর রুলিং প্রধান বিচারপতি ভার্চুয়ালি দিয়েছেন। পুরো করোনাকালীন বিচারকার্য ভার্চুয়ালি পরিচালিত হয়েছে, তাই এক্ষেত্রে ভার্চুয়ালি জুডিশিয়াল ক্যু করলে বাস্তবায়ন করতে না পারলেও রায় বৈধ হতো। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের উচিত ছিল হাসিনা সরকারের পতনের পর সংবিধানকে স্থগিত করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আর বিপ্লবী সরকার এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। বিপ্লবী সরকার হলে জুডিশিয়াল ক্যুর প্রশ্নই আসতো না।

লেখক:
আরিফুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ;
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, (বিইউবিটি)।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 shomoyeralo24
Site Customized By NewsTech.Com