1. asaduzzamann046@gmail.com : admi2017 :
  2. editor@shomoyeralo24.com : Shomoyer Alo : Shomoyer Alo
শিরোনাম :
চাহিদামতো ঘুষের টাকা নিয়েও কাজ করে না ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ছাগলনাইয়া মৌরী নদীরপারে অপহৃত জসিম উদ্দিন চৌধুরীর লাশ উদ্ধার ইটনায় সেনাবাহিনীর হাতে দেশীয় অস্ত্রসহ যুবদল নেতা গ্রেফতার, সংঘর্ষে আহত ১ শেখ হাসিনা কি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? আইন কী বলে জুডিশিয়াল ক্যু’র মাধ্যমে ড. ইউনূস এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করা যেত কী: আইন ও বাস্তবতার বয়ান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মাস্টাররুলে কর্মরত কর্মচারীদের স্থায়িত্বকরণে মানববন্ধন মৌলভীবাজার রাজনগর উপজেলায় বিএনপি নেতার বাড়ীতে যৌথবাহিনী হামলা ও মামলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে কার নিকট পদত্যাগ করবেন, আইন কী বলে মুন্সিগঞ্জ টুংগিবাড়ী উপজেলায় বিএনপি নেতা দোলন ও কুমারী মুসরাত গুমের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ফেনী সদর উপজেলা মধুপুর গ্রামে সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারে হামলা ও ডাকাতি

ছাত্র জীবনের যে ভুলগুলো আইনে পড়ুয়াদের কর্মজীবনে পিছিয়ে দেয়:(প্রথম কিস্তি)

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ২২১২ বার

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এতে মোট ২ হাজার ৫৩৯ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়া ৩৪৫টি খাতা তৃতীয় পরীক্ষকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। ইহা আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ। এবারের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর। লিখিত পরীক্ষার মাস খানেক আগে ১৭ নভেম্বর ২০২৩ হয়েছিল আইনজীবী তালিকাভুক্তির প্রথম ধাপের নৈর্ব্যত্তিক (MCQ) পরীক্ষা। প্রায় ৪০ হাজার পরীক্ষার্থী প্রথম ধাপের এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে মাত্র ৬ হাজার ২২৯ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নিমিত্তে উত্তীর্ণ হয়। যা মোট পরীক্ষার্থীর ১৫ শতাংশের একটু বেশি। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার মোট পরীক্ষার্থীর ৬.৫ শতাংশেরও কম। আমরা সহজে বলতে পারি, প্রতি ১০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ শেষ করে মাত্র ৬ জন পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেল। এখানেও হয়তো কিছু পরীক্ষার্থী খারাপ করবে। সব মিলিয়ে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার সকল পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫ শতাংশের মতো হতে পারে। আর যদি মৌখিক পরীক্ষায় সকলেই পাশ করে তাহলে হবে ৬ শতাংশের কিছু বেশি। বিষয়টি বড়ই চিন্তার। আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শুধু যে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা তা নয় বরং তাদের অভিভাবক, শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সম্মানিত শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। একটি স্বাধীন পেশায় প্রবেশের ক্ষেত্রে এই প্রতিবন্ধকতা অনেকের জন্য হতাশার সৃষ্টি করছে। নিবন্ধন নিয়ে সকলেই যে আদালতে আইনের চর্চা (প্রাকটিস) করবেন বিষয়টি এমন নয়। অনেকেই আছেন শুধু সম্মানের জন্য নিবন্ধনটা নিয়ে রাখেন, নিবন্ধনের পর বার কাউন্সিল ও বার সমিতিতে নিয়মিত চাঁদা দিয়ে যান। তারা এই নিবন্ধন ব্যবহার করে জীবনে মামলা-মোকদ্দমা থেকে এক টাকাও উপার্জন করেন না। সে কারণেই অনেকের প্রশ্ন, বার কাউন্সিলের নিবন্ধন পেতে এত কঠিন প্রক্রিয়া পার হতে হবে কেন? আসলে এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর আমাদের কাছে নেই। বার কাউন্সিল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশের আইন শিক্ষার উন্নয়নে ও আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়নে আইনানুসারে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে বার কাউন্সিল কারো নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। আমরা অতীতে বিভিন্ন সময় দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস ও বিজেএস পরীক্ষায়ও ফল বিপর্যয় ঘটে। স্বায়ত্তশাসিত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বাস্তবে আন্দোলন করে কিছুই করা যায় না।

সর্বশেষ লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর, আইন ছাত্রদের বিভিন্ন সংগঠন ও অনলাইন গ্রুপ আইনে পড়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের দাবি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা এরকম আন্দোলন সংগ্রাম, মিছিল মিটিং করোনা পরবর্তী ২১ ব্যাচের পরীক্ষার আগেও দেখেছি। অনেক জোরালো আন্দোলন ছিল, বাস্তবে কোন ফল আসেনি। প্রশ্ন হল, সবাই তো একই পরীক্ষার প্রশ্নে অংশগ্রহণ করল তাহলে পরীক্ষা পদ্ধতি খারাপ হলে সংখ্যায় কম হলেও ২ হাজার ৫৩৯ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলো কীভাবে। তারা কে, কোথায়, কীভাবে পড়াশোনা করল? ভাগ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও, যাঁরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন নিশ্চয়ই তাঁদের কোনো সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও পরিশ্রম অবশ্যই ছিল যা আমরা অনেকেই জানিনা। আর যারা ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের নিশ্চয়ই কোনো না কোনো ঘাটতি ছিল। নিজে নিজে আত্মসমালোচনা করলেই অনেকে উত্তর পাবেন। একজন আইনের ক্ষুদ্র শিক্ষক হওয়ার কারণেই, ছাত্র-ছাত্রীদের বাস্তব অবস্থা চোখে দেখেই এই উপলব্ধি। তবে অনেকের ক্ষেত্রে আমার এই উপলব্ধি ভুলও হতে পারে।

নিজে আইনের ছাত্র ও বর্তমানে এই বিভাগের শিক্ষক হওয়ার কারণে, আমার দৃষ্টিতে ছাত্র জীবনের কিছু কিছু ভুল যা আইনের ছাত্রদের কর্মজীবনে সফলতা পেতে বিলম্বিত করে বা পিছিয়ে দেয়। এই নিবন্ধে আইনের ছাত্রদের ভুলগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

প্রথম ভুল: সাবজেক্ট হিসেবে আইন পছন্দ করা

এক্ষেত্রে সরকারি (পাবলিক) ও বেসরকারি (প্রাইভেট) বিদ্যালয়ের ক্ষেত্র কিছুটা আলাদা। প্রথমেই বলি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। দেশের হাতেগোনা দু-তিনটে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ভর্তির জন্য ভিন্ন প্রশ্নে বিভাগ অনুযায়ী পৃথক পরীক্ষা হয়। তাছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত অথবা ইউনিট হিসেবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। সেখানে অনেকগুলো বিষয়ের মধ্য থেকে শিক্ষার্থীরা আসন খালি থাকা সাপেক্ষে আইনে পড়ার সুযোগ পায়। সাধারণত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীরা চিন্তাভাবনা করে পরীক্ষা দিয়ে আইনে ভর্তি হয় অথবা যাঁরা মেধাক্রমে প্রথম সারিতে থেকে আইনে ভর্তি হয় তাঁদের কথা ভিন্ন, তাঁরা সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা করেই আইনে ভর্তি হয়। এবং সাম্প্রতিক বিজেএস ও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই অনেক ভালো করে এমনকি বারবার প্রথম স্থান অর্জন করছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গুচ্ছ বা ইউনিট ভিত্তিক যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সেখানে, এখানে ভর্তির সময় নবীন শিক্ষার্থীরা সেশন জ্যাম বিষয়ে কিছুই জানে না। সেশন জ্যাম আগের চেয়ে কমলেও, এখনো দেশের কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই থেকে তিন বছর সেশন জ্যাম রয়েছে। আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। ৫ বছরের অনার্স- মাস্টার্স শেষ করে রেজাল্ট পেতে প্রায় ৮ বছর সময় লেগে গেছে। জীবন থেকে এই ৩ বছর সময় অতিরিক্ত নষ্ট না হলে আমার বা আমার বন্ধুদের অনেকের জীবনের গল্প ভিন্ন হতে পারত। অথচ যখন আইনে ভর্তি হয়েছি তখন এমন বিভাগেও ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছিল যেখানে কোনো সেশন জ্যাম ছিল না। যে সময়টা সেশনজামে নষ্ট হয় অধিকাংশ আইনের শিক্ষার্থীরাই এই সময়ের মধ্যে নিজেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করাতে পারে। সেশন জ্যামে আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও সেশন জ্যামহীন শিক্ষার্থীদের সাথে কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় পিছিয়ে পড়ে, একই শিক্ষাবর্ষ হওয়া সত্ত্বেও তারা সব সময় জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এরা কখনোই ওই চাকরির সর্বোচ্চ পদে আরোহন করতে পারে না। ভর্তি হওয়ার সময় যদি এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ভর্তি হয় তাহলে অনেকেই এসব সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারে। যদি সেশন জ্যাম না থাকে তাহলে আইনে ভর্তি হন অথবা আমার মতে আইনে ভর্তি হওয়ার চেয়ে সেশন জ্যামহীন অন্য বিভাগে ভর্তি হওয়া শ্রেয়। আমি ভুক্তভোগী হওয়ায় আমার দৃষ্টিতে এটি একটি ভুল।

এবার আসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও আইনে ভর্তির ক্ষেত্রে গুটি কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয় না। কিছু শর্ত পূরণ করে ভর্তি করা হয়। প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে যাঁরা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয় তাঁরা চিন্তাভাবনা করেই আইন বিভাগে পড়ে। তাঁদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। এর বাইরে অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আইন বিভাগের মোট শিক্ষার্থীর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চিন্তাভাবনা করেই আইনে ভর্তি হয়। বাকিরা অন্যের পরামর্শে বা প্ররোচনায় কিছু না বুঝেই আইনে ভর্তি হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী কলেজ জীবনে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আইনে পড়তে এসে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে আইন পড়তে হয়। যে শিক্ষার্থীর ইংরেজিতে দুর্বলতা আছে, চিন্তাভাবনা না করে তার জন্য আইনে ভর্তি হওয়া খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত নয়। ইংরেজি ভীতির কারণে, অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হয় না। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য আইনে ভর্তি হওয়া মানে একজন অসাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীর একটি আসন নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ এবং তাদের অভিভাবকরা ভর্তির সময় দেখেন ৪ বছরে কত টাকা খরচ হবে, কিন্তু অনেকেই যা করেন না তা হল, যে বিভাগে ভর্তি হতে যাচ্ছি সে বিভাগের শিক্ষকদের যোগ্যতা ও সুনাম কেমন, প্রাক্তন ছাত্রদের কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া, বার কাউন্সিল ও জুডিশিয়ারিতে তাদের সাফল্য কেমন, কত টাকা খরচ হবে তার চেয়ে এটা জানা বেশি জরুরি। কষ্ট করে হয়তো আপনি এক লক্ষ টাকা বেশি খরচ করতে পারবেন, কিন্তু জীবনে যদি একবার ভুল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে যান তাহলে সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারবেন না। সার্টিফিকেট অর্জন হলেই যে জ্ঞান অর্জন হবে বিষয়টি এমন নয়, কিন্তু জ্ঞান অর্জন হলে সার্টিফিকেট এমনিতেই অর্জিত হবে। অতএব আইনে পড়ার ক্ষেত্রে মানসম্মত শিক্ষা যেখানে পাওয়া যাবে সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যারা ভর্তির সময় এই ভুল করেছেন তারা অবশ্যই কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবেন। আমার মতে বর্ণিত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই না করে শুধু কারো প্ররোচনায় আইনে ভর্তি হওয়া একটা ভুল সিদ্ধান্ত।
(চলবে )

লেখক:
আরিফুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, আইন ও বিচার বিভাগ;
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ
© All rights reserved © 2020 shomoyeralo24
Site Customized By NewsTech.Com